এবার কি সঙ্গীত নিয়েও শুরু হল ভাগাভাগির রাজনীতি? সঙ্গীতেও বসল কাঁটাতার? ধর্ম, জাতপাত, রাজনৈতিক ভেদাভেদ দূর করতে যখন দু’দেশ বা দুই রাজ্যের সিনেমা, শিল্প, সঙ্গীতকেই কাজে লাগানোর কথা বলছেন সমাজকর্মীরা, তখন সঙ্গীত শিল্পী শান-এর একটি কনসার্টে স্রেফ বাংলা গান গাওয়ার জন্য অপমান করা হল তাঁকে।
সোমবার সন্ধ্যায় গুয়াহাটির সারুসাজাই স্টেডিয়ামে ঘটনাটি ঘটে। অনুষ্ঠান চলাকালীন দর্শকদের একাংশ থেকে মন্তব্য উড়ে আসতে শোনা যায়, ‘এটা আসাম। বাংলা নয়।’ এসময়েই শানের দিকে উড়ে আসে কাগজের বল।
হতভম্ব হয়ে গান থামিয়ে দেন তিনি। এরপরই দর্শকদের উদ্দেশে ক্ষুব্ধ স্বরে বলেন, ‘এটাকে রাজনৈতিক সভা বানানোর চেষ্টা করবেন না। আমি একজন শিল্পী। শিল্পীর কোনও দেশ বা রাজ্য হয় না। সঙ্গীতেরও না। একজন শিল্পীর সঙ্গে এরকম করবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার খুব জ্বর। শুধু আপনাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে সারা রাত গান করছি। এই কি তার প্রতিদান? কনসার্টে এ ধরনের দর্শক যদি থাকেন, তাহলে আমি পারফর্ম করব না।’ বলেই মঞ্চ ছেড়ে নেমে যান গায়ক।
পরে অবশ্য ফের উদ্যোক্তাদের অনুরোধে মঞ্চে ওঠেন তিনি। কিন্তু, টুইটারে এবিষয়ে নিজের ক্ষোভের কথা জানান শান। লেখেন, ‘আমার এই প্রতিবাদ কোনও একজন বা দর্শকদের কোনও একটি অংশের জন্য নয়। বরং সেই সমস্ত মানুষের বিরুদ্ধে যাঁরা আঞ্চলিক বিভাজনের নীতিতে বিশ্বাস করেন। আমার আশা আজকের প্রজন্ম এই বিভাজনের ফাঁদে পড়বে না।’
ঘটনার কথা জানাজানি হলে, আসামের অনেকেই দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চান তাঁর কাছে। ঘটনাটি অনভিপ্রেত বলেও জানান অনেকে। তবে এ প্রশ্ন উঠছেই, অসমে কি ফের উগ্র প্রাদেশিকতা মাথা চাড়া দিচ্ছে? ফের কি ফিরে আসবে আটের দশকের ‘বাঙালি খেদাও’ আন্দোলন?
প্রসঙ্গত, এনআরসি ইস্যু ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা আসাম জুড়েই৷ সরকারের দাবি, বহিরাগতদের নাগরিকত্ব দেওয়া যাবে না৷ তাই সে রাজ্য থেকে চলছে নাগাড়ে বাঙালি বিতারন৷ শানের উপর হামলাও এনআরসির প্রভাব বলেই মনে করছেন রাজনীতিবিদদের একাংশ।