চিরকালই তাক লাগিয়ে দিতে ওস্তাদ চিন। সদ্যই বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু বানিয়েছে তারা। তবে সেই সেতুর দৈর্ঘ্য এতটাই বেশি যে, অতটা পথ পেরোতে গিয়ে নাকি প্রায় ঘুমিয়েই পড়ছেন বাস চালকেরা!
চিনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে হংকং ও ম্যাকাওকে সংযুক্ত করেছে এই সেতুটি। সমুদ্রের উপর ৫৫ কিলোমিটার (৩৪ মাইল) দীর্ঘ এই সি-ক্রসিং ব্রিজটি এই মুহূর্তে বিশ্বের দীর্ঘতম সেতুর তকমা পেয়েছে। রোড ব্রিজের পাশাপাশি সমুদ্রের নীচের টানেল— হংকংয়ের ল্যানটাও দ্বীপকে জুহাই ও ম্যাকাও শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করে রেখেছে এই সেতু।
উদ্বোধনের পর সেতু খুলে দেওয়া হয়েছে জনসাধারণের জন্য। সেতুর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং। রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরাও। তবে সেই সিসিটিভি ফুটেজেই নাকি ধরা পড়েছে এক অদ্ভুত দৃশ্য। দীর্ঘ এই সেতু পারাপার করতে গিয়ে নাকি বার কয়েক হাই তুলছেন বাস চালকরা। সামান্য ঝিমোতেও দেখা যাচ্ছে তাঁদের।
২০০৯ সালে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়েই এগিয়ে চলে কাজ। নির্মাণ সংস্থার ঢিলেমি, বাজেট নিয়ে সমস্যা এবং নির্মাণকালীন নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সেতুর কাজ মাঝে একপ্রকার বন্ধই হয়ে গেছিল। নির্মাণ চলার সময় মৃত্যু হয় ১৮ জন শ্রমিকেরও। ফলে, সেতুর নিরাপত্তা নিয়ে সেসময় বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়ে যান কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, সেতুটি তৈরি করতে খরচও কম হয়নি। এক লক্ষ ৪৭ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে আস্ত এই সেতুটি তৈরি হয়েছে। পুরো মাত্রায় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় এবং ভূমিকম্প প্রতিরোধী এই সেতু। সূত্র থেকে পাওয়া খবর, সেতু গড়তে ব্যবহার করা হয়েছে চার লক্ষ টন স্টিল। এই পরিমাণ স্টিল দিয়ে নাকি ৬০টি আইফেল টাওয়ার নির্মাণ করা সম্ভব, দাবি প্রযুক্তিবিদদের।
সেতুটির প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার পার্ল নদীর উপর দিয়ে গেছে, আর জাহাজ চলাচল চালু রাখতে ৬.৭ কিলোমিটার রাখা হয়েছে সমুদ্রের নিচের সুড়ঙ্গপথে। হংকং, ম্যাকাও-সহ চিনের ন’টি শহরকে সংযুক্ত করেছে এই সেতু। কর্তৃপক্ষের মতে, যান চলাচল অনুমতি সাপেক্ষ এবং অবশ্যই দিতে হবে কর। দিনে প্রায় ৯,২০০ যান এই সেতু দিয়ে চলাচল করবে।
আগে হংকং থেকে ম্যাকাও পাড়ি দিতে সময় লাগত প্রায় ৩ ঘন্টার মত। কিন্তু এখন এই রাস্তা পার হতে লাগছে মাত্র ৩০ মিনিট। এই সেতুতে যান প্রতি টোল ট্যাক্সও ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, যা অন্যান্য সেতুর তুলনায় অনেকটাই বেশি।