চিতাতেই সব শেষ নয়। মানুষের মৃত্যুর পরও তাঁর দেহের নির্দিষ্ট কিছু অঙ্গ প্রতিস্থাপনযোগ্য। অর্থাৎ তা নতুন জীবন দিতে পারে অন্য মানুষকেও। একজন মৃত মানুষের দৃষ্টি ফিরে আসে অন্যের চোখে। তাঁর হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানি শোনা যায় অন্য শরীরে। একইভাবে ফুসফুস, কর্নিয়া, যকৃৎ, অগ্ন্যাশয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিও সঠিক সময়ে কাজে লাগালে প্রাণ বাঁচানো যেতে পারে অনেক মানুষের। এহেন ‘অঙ্গ প্রতিস্থাপন’ বিষয়টিকে এবার স্কুলপাঠ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে বিষয়টি অবশ্যপাঠ্য হচ্ছে।
আগেই সফল অঙ্গ প্রতিস্থাপন শুরু হয়ে গিয়েছিল এ রাজ্যে। এবার তার পুরো বৃত্তান্ত স্কুলের বইয়ে পড়বে ছাত্রছাত্রীরা। বসিরহাটের স্বর্ণেন্দুর পাশাপাশি স্কুলপাঠ্যে থাকছে পর্ণশ্রীর কাজরী বসু, শোভনা সরকার, প্রীতম সাহাদের মতো অঙ্গদাতাদের নাম। রাজ্যের মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অষ্টম শ্রেণির স্বাস্থ্য ও শারীর শিক্ষা পাঠ্যক্রমে বিষয়টি ঢোকানো হবে। স্কুলশিক্ষা বিশেষজ্ঞ কমিটির উদ্যোগে বই ছাপানোর কাজও শেষ। বইটি সম্পাদনা করেছেন দীপেন বসু। দীপেন বাবু জানিয়েছেন, ‘রাজ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ চলছে। পড়ুয়াদের অঙ্গ প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত প্রাথমিক পাঠ দেওয়ার তালিমও চলছে। রাজ্যে যে ১২ হাজার শারীর শিক্ষার শিক্ষক আছেন, তাঁদেরও প্রশিক্ষিত করা হবে।’
দপ্তরের কর্তাদের বক্তব্য, ‘অমরত্ব লাভের সবচেয়ে সহজ পথ অঙ্গদান। বসিরহাট স্কুলের ছাত্র স্বর্ণেন্দুর মৃত্যু ওই স্কুলের সবাইকে প্রবল নাড়া দেয়। আমরা সবাইকে জানাতে চাই, ওই ছাত্রের পুরোপুরি মৃত্যু হয়নি। অন্যের শরীরে সে এখনও বেঁচে আছে। অঙ্গদান বিষয়টি অনেক পড়ুয়া বা তাদের অভিভাবক জানেন না। তা জানাতেই স্কুলপাঠ্যে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।’
রাজ্য সরকার ইদানীং অঙ্গ প্রতিস্থাপনে তুমুল উৎসাহ দিচ্ছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ব্যাপারে পুলিশকে উদ্যোগী হতে বলেছেন। ‘ব্রেন ডেথ’ হওয়া মানুষের অঙ্গ স্থানান্তরের সময় রাস্তার সমস্ত সিগন্যাল সবুজ রাখা হয়। ‘গ্রিন করিডর’ বানিয়ে পাইলট সামনে রেখে বিভিন্ন হাসপাতালে পৌঁছে যায় মৃতের নানা অঙ্গ।
২০১৬ সালে প্রথম গ্রিন করিডর ব্যবহার করে অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছিল বাংলায়। উত্তর ২৪ পরগনার স্কুল ছাত্র স্বর্ণেন্দু রায় এক দুর্ঘটনায় জখম হয়ে হাসপাতালে ভরতি ছিল। চিকিৎসকরা ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণার পর পরিবার অঙ্গদান করার সিদ্ধান্ত নেয়। সন্তানের কিডনি, চোখ ও লিভার দান করতে সম্মত হন মৃতের বাবা-মা। সেইমতো কলকাতার ইএম বাইপাসের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে গ্রিন করিডরের মাধ্যমে অঙ্গগুলি পৌঁছে যায় শহরের অন্য তিনটি হাসপাতালে। সংশ্লিষ্ট রোগীদের দেহে প্রতিস্থাপনের জন্য যাত্রা পথে যাতে কোনও বাধা না আসে তা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা।