পুরাণমতে দশমীতেই দেবী কৈলাসে পাড়ি দেন। রীতি মেনে বহু পুজোর প্রতিমা বিসর্জনও হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। বাকি জায়গার প্রতিমাও বিসর্জন হয়ে যাবে ২৩ তারিখের মধ্যেই। বিজয়ার পর চারিদিকে যখন বিষাদের ছায়া ছড়িয়ে পড়েছে, তখন কাঠামো পুজোর মাধ্যমে আসন্ন জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রস্তুতির আনন্দে মেতে উঠল চন্দননগর।
চিরাচরিত প্রথা মেনে চন্দননগরের ঐতিহ্যবাহী বারোয়ারি ও পারিবারিক পুজোগুলির কাঠামো পুজোর মাধ্যমে এদিন থেকেই উৎসব পর্বের সূচনা হল। উৎসবের দিনগুলিতে দর্শনার্থীদের কাছে নিজেদের সেরা হিসেবে তুলে ধরতে এখন থেকেই বেশ কয়েকটি জায়গায় মণ্ডপ তৈরির কাজও শুরু করে দিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
আলোর ব্যাপারে চন্দননগরের বিশেষ সুনাম রয়েছে বরাবরই। এবারও নিজেদের সেরাটা তুলে ধরার জন্য নাওয়া-খাওয়া ভুলে শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন আলোক শিল্পীরাও। সকলেরই এক চেষ্টা, কীভাবে উৎসবের আলোতে অভিনবত্ব আনা যায়।
দুর্গাপুজো বাঙালির বড় উৎসব হলেও, চন্দননগরের মানুষের প্রাণের উৎসব জগদ্ধাত্রী পুজো। তাই দুর্গাপুজো নিয়ে এখানকার মানুষের মধ্যে উৎসাহ সেভাবে দেখা যায় না। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নমো নমো করে কয়েকটি জায়গায় দুর্গাপুজো হলেও, গোটা শহরে সেভাবে থিম বা বড় বাজেটের পুজো দেখা যায়নি।
দশমীর দিন সকাল থেকেই চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বর এলাকার চাউলপট্টি আদি জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটি, উর্দিবাজার জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটি, লক্ষ্মীবাজার সর্বজনীন, ফটকগোড়া সর্বজনীন, মধ্যাঞ্চল সর্বজনীনের মতো ঐতিহ্যবাহী পুজোকমিটি খুঁটি পুজোর মাধ্যমে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। রাজ্য তথা ভিন রাজ্যেও চন্দননগরের আলোর অভিনবত্ব তুলে ধরে চমক দেওয়ার জন্য দিন-রাত এক করে চুড়ান্ত প্রস্তুতির কাজ করছেন আলোকশিল্পীরা।
জগদ্ধাত্রী পুজোয় নিরাপত্তা ও দর্শনার্থীদের ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ের বৈঠক সেরে ফেলেছে জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকরা। পুজোর কদিন নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
বাসিন্দারা জানান, দুর্গাপুজো মানেই নতুন জামাকাপড় পরে ঠাকুর দেখতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ার চেনা সেই ছবি চন্দননগরে সেভাবে দেখা যায় না। জগদ্ধাত্রী পুজোতেই এখানকার মানুষ নতুন জামাকাপড় পরে। চন্দননগরের বিখ্যাত আলোর কেরামতি ও ঠাকুর দেখার জন্য রাস্তায় নামেন অসংখ্য মানুষ। ওই কয়েকটা দিনের জন্য আমরা সারা বছর মুখিয়ে থাকি।