দশেরায় রাবণ দহনের অনুষ্ঠান পরিণত হল ভয়াবহ দুর্ঘটনায়। রেল লাইনের উপর এবং পাশে দাঁড়িয়ে রাবণ পোড়ানো দেখছিলেন কয়েকশ মানুষ। সেই ভিড়ের ওপর দিয়েই দুরন্ত গতিতে চলে গেল ট্রেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা ঘটে পঞ্জাবের অমৃতসরের চৌরি বাজার এলাকায়। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ৫০। আহত শতাধিক। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন পুলিশ এবং উদ্ধারকারীরা।
দশেরা উপলক্ষে অমৃতসরের চৌরা বাজারের জোড়াফাটকে চলছিল রাবণ দহন অনুষ্ঠান। ভিড় জমিয়েছিলেন প্রচুর মানুষ। পাশেই রয়েছে রেললাইন। রাবণ বধের অনুষ্ঠান ঘিরে তখন উত্তেজনা তুঙ্গে। তীর দিয়ে রাবণের গায়ে আগুন লাগাতেই বাজি ফাটতে শুরু করে। আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে পড়ে এদিক-ওদিক৷ আতঙ্কে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়৷ আগুনের ফুলকির ভয়ে প্রায় অনেকে রেল লাইনে চলে আসেন। ঠিক তখনই ডিএমইউ ও অমৃতসর মেল একসঙ্গে চলে আসে। রাবনের কুশপুতুল পোড়ানোর সময় বাজির শব্দে কোনও অন্য আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল না। ফলে ট্রেন আসছে সেটা টের পায়নি জনতা। আবার আপ এবং ডাউন দুই লাইনেই ট্রেন চলে আসায় কেউ পালাতেও পারেননি। দু’টি ট্রেনের তলায় চাপা পড়ে যান অনেকে। ট্রেনের ধাক্কায় ছিন্নভিন্ন হয়ে ছিটকে পড়ে দেহ। দুর্ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাতে দেখা যাচ্ছে, রাবণ দহনের অনুষ্ঠানে মজে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। ঠিক তখনই প্রবল গতিতে চলে যাচ্ছে ট্রেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাবণ দাহ যারা করছিলেন সেই আয়োজকেরা ট্রেন আসার ব্যাপারে উপস্থিত জনতাকে সতর্ক করতে পারতেন।
দুর্ঘটনার পরই পুলিশের বিশাল বাহিনী উদ্ধার কাজে নেমে পড়েন। হাত লাগিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আলোর অভাবে উদ্ধার কাজ প্রথম দিকে যথেষ্ট ব্যহত হয়। টর্চ এবং মোবাইলের আলোতে উদ্ধার কাজ চালাতে হয়। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দার সিংহ শনিবার সকালেই ঘটনাস্থলে যাবেন বলে জানা গেছে। তিনি গোটা ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, ‘আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারের।’ ইতিমধ্যেই মৃতদের পরিবার পিছু পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছে পঞ্জাব সরকার।
এলাকার মানুষ রেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, ‘ট্রেনটি এত মানুষের ভিড় দেখেও গতি কমায়নি। হর্ণও দেয়নি দর্শকদের সতর্ক করতে। গোটা ঘটনা ঘিরে রাজ্য প্রশাসন এবং রেল কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যার জেরে প্রাণ গেল এত মানুষের। প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ের পাশে এই অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হল? আর হলেও রেল কর্তৃপক্ষকে কী জানানো হয়েছিল?
উত্তর রেলের জনসংযোগ আধিকারিক বলেন, ‘সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে অমৃতসর এবং মানেওয়ালার মাঝখানে ২৭ নম্বর গেটের সামনে। একটি ডিএমএউ ট্রেন চলে যায় ভিড়ের ওপর দিয়ে’। প্রথম দফায় অমৃতসর সিভিল হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজে আহতদের নিয়ে যাওয়া হয়। অমৃতসর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের। আরও অনেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়ায় পুলিশের অনুমান মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।