মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঠানো পাজামা-পাঞ্জাবি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য গ্রহণ করতেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন রাজ্য সিপিএমের অধিকাংশ নেতা। বুদ্ধবাবুকে আক্রমণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিলেন তাঁরা। বয়ে গেল সমালোচনা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের ঝড়।
সৌজন্যের রাজনীতি দেখিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজোয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী মীরাদেবীর জন্য মমতা পাঠিয়েছেন পাজামা-পাঞ্জাবি এবং শাড়ি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই মমতার সৌজন্যের রাজনীতির তারিফ করেছে রাজ্যবাসী। কিন্তু ভ্রু কুঁচকেছে রাজ্য সিপিএমের অধিকাংশ নেতার। তাঁদের কথায়, ‘সিপিএম কর্মীরা যখন মার খাচ্ছেন তখন বুদ্ধদেবের পাঞ্জাবি নেওয়া মানায় না’। কলকাতার এক সিপিএম নেতার কথায়, ‘পার্টি সার্কুলার জারি করেছিল, তৃণমূলের দেওয়া কোনও উপহার দলের কেউ গ্রহণ করবে না। বুদ্ধবাবুর জন্য কি আলাদা সার্কুলার জারি করা হয়েছে’? বামপন্থী কর্মী সমর্থকদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে উত্তর চব্বিশ পরগণার এক সিটু নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে তীব্র বিদ্রুপ করে লিখেছেন, ‘গ্রামে গঞ্জে কর্মীরা তৃণমূলের হাতে মার খাচ্ছে আর ওখানে উনি পাঞ্জাবী নিচ্ছেন’।
সৌজন্যের এমন উদাহরণ দেখে সিপিএমের গাত্রদাহ কেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলায় সিপিএমের প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূল। সেই তৃণমূলের প্রধান নেত্রীর থেকে উপহার নেওয়ায় মাথা ঠিক রাখতে পারছে না সিপিএম মেতারা। তৃণমূলকে হারাতে চেষ্টার কসুর করেনি তারা। এখনও চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু প্রতি পদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরাজিত করেছেন তাঁদের। সেটা রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই হোক কিংবা আন্তরিকতা। সেই মমতার পাঠানো উপহার যখন বুদ্ধবাবু গ্রহণ করেছেন তখন আর থাকতে পারছে না এই বাম নেতারা। বুদ্ধবাবু উপহার গ্রহণ করায় তাঁরা একটা সুযোগও পেয়ে গেছেন। মমতার কেশাগ্র স্পর্শ করতে না পেরে তাঁরা গায়ের জ্বালা মেটাচ্ছেন বুদ্ধবাবুকে আক্রমণ করে। মমতার সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে না পেরে ওঠায় এখন এই পথ নিয়েছে সিপিএম। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে সিপিএম। মমতার পাঠানো উপহার গ্রহণ করায় বুদ্ধবাবুকে আক্রমণ সেই দেউলিয়া মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ।
তাই সিপিএম যাই বলুক, রাজনৈতিক মহলের মতে, এটি মমতার সৌজন্যের অনন্য নজির। পুজোর সময় উপহার দেওয়া স্বাভাবিক শিষ্টাচার। আর বিরোধী পক্ষের কুশীলবকে পুজো উপহার পাঠিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সেই শিষ্টাচারকেই সম্মান জানিয়েছেন। পাশাপাশি এক অনন্য নজির সৃষ্টি করলেন রাজনীতিতেও। আর বুদ্ধবাবু মমতার পাঠানো উপহার গ্রহণ করে সেই সৌজন্যের মর্যাদা দিয়েছেন।