এবারের লোকসভা নির্বাচনে প্রথম দফার ভোট থেকেই শুরু হয়েছিল ভোট কম পড়ার প্রবণতা। পঞ্চম দফার ভোট পর্ব শেষেও তা অব্যাহত। আর তার জেরেই গেরুয়া শিবিরের অন্দরে এই প্রশ্ন উঠছে, যে ভোট কম পড়ছে কেন? মোদী হাওয়াই বা কোথায় গেল? যে ভোট জমা হচ্ছে ইভিএমে তা পড়ছে কার ঝুলিতে? ২০১৪ আর ২০১৯-র মতো ভোটারদের মধ্যে এবার আর সেই উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না কেন? সর্বত্র কেন এক অস্বস্তিকর নীরবতা?
সূত্রের খবর, সোমবার পঞ্চম দফা চালাকালীনই বিজেপির সদর দপ্তরে দলের সব সাধারণ সম্পাদক ও উচ্চ পদাধিকারীদের নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। ভোটের মাঝে বিজেপির এমন স্ট্র্যাটেজি বৈঠক এক কথায় নজিরবিহীন। রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের থেকে আগেই রিপোর্ট নেওয়া ছিল। সোমবার শীর্ষস্তরের থেকে ভোটের গতিপ্রকৃতি সংক্রান্ত ফিডব্যাক নিয়েছেন নাড্ডা।
যদিও এই রিপোর্ট তলবের নেপথ্যে যে আসলে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ রয়েছেন, সে ব্যাপারে দলের অন্দরে সংশয় নেই। বৈঠকে ছিলেন বি এল সন্তোষ, অশ্বিনী বৈষ্ণবরাও। বৈঠকের অন্যতম আলোচ্য ছিল, ভোটের হারে ধস। শহর কিংবা গ্রাম, ভোট কেন কম পড়ছে, সেটা জানার জন্য দ্বিতীয় দফার পরই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে থাকা দলীয় নেতৃত্বকে বলা হয়েছিল বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠাতে।
বিজেপির কাছে চিন্তার কারণ হল, বিগত তিন বছর ধরে সবথেকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে বুথ স্তরের সংগঠনে। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে, বিজেপি শাসিত রাজ্য হোক কী অ-বিজেপি শাসিত রাজ্য, সর্বত্রই নীচুতলার নেতাকর্মীরাই কার্যত বসে গিয়েছেন। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, বিজেপির নিজের ভোটব্যাঙ্ক যেখানে শক্তিশালী, সেইসব রাজ্য এবং লোকসভা কেন্দ্রগুলিতেও ভোটাররা বুথমুখী হচ্ছেন না।
এখন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, বিজেপির বুথ স্তরের কর্মী ও নেতারাই ভোটারদের বুথে নিয়ে আসতে ব্যর্থ হচ্ছেন। প্রতিটি ভোটপর্বেই দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের তুলনায় বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রে ভোটের হার কমেছে। এমনকী রিপোর্ট বলছে, পঞ্চম দফায় ভোটদানের হার মোটেও আশানুরূপ নয়। এর নেপথ্যে বিগত ১০ বছর ধরে বিজেপির অন্দরে থাকা গণতন্ত্র ও খোলা হাওয়াকে টুঁটি চিপে খুন করে মোদী-শাহরাজ কায়েম।
আর তার জেরেই এই ১০ বছরে দলের একের পর এক সুচিন্তিত নেতা-নেত্রী ক্রমশই কোণঠাসা হয়েছেন। যেই বিরুদ্ধে কিছু কথা বলেছেন বা বেসুরো হয়েছেন তাঁকেই কোণঠাসা করে দেওয়া হয়েছে। দলের রাজনীতির ময়দান থেকেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে সব পদ, সব ক্ষমতা। এখন দলের সেই বিক্ষুব্ধ নেতা থেকে কর্মীরা সরে গিয়েছেন দলের পাশ থেকে। আর তার জেরেই ভোটে ধস পদ্মের বাক্সে।