তৃতীয়ার বিকেলে আকাশ ভাঙা বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি মাথায় করেই মানুষ ভিড় করেছেন জগৎ মুখার্জী পার্কের পুজো মণ্ডপের সামনে। গতকালই ছিলো এই পুজো মণ্ডপের উদ্বোধন। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই মণ্ডপ ঘুরে গেলেন কলকাতা নাইট রাইডার্স টিম। মণ্ডপে এলেন বিধায়ক ও মন্ত্রী শশী পাঁজা, মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার, অভিনেত্রী সাংসদ শতাব্দী রায়। কিন্তু যার জন্য অধীর অপেক্ষা তিনি কোথায়? টলিউড তারকা দেবের কথা বলছি। তাঁকে দেখার জন্য এতো ভিড়। তিনি এলেন রাত সাড়ে নটা নাগাদ। জনস্রোতে মণ্ডপ ভেঙে পড়ার অবস্থা। ভিড় সামাল দিতে হিমশিম পুলিশ।
https://www.facebook.com/ekhonkhobor18/videos/336423900240698/?t=4
তবে নাইট রাইডার্স টিম চলে যাওয়ার পরেই, মণ্ডপ দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিলো। ছাতা মাথায় দিয়ে মানুষের প্রতিমা দর্শনের উৎসাহে খামতি ছিলোনা। ‘এখন খবরের’ নিয়মিত পাঠক যারা তাঁরা জানেন এই বছরের জগৎ মুখার্জী পার্কের পুজোর থিম ‘টাইম মেশিন’। আমরা জানিয়েছিলাম সে কথা আগেই। কয়েকদিন আগে মণ্ডপ সাজানোর প্রস্তুতি চলছে, তখন দেখেছিলাম শিল্পী সুবল পালের নেতৃত্বে ৩৫ জন মানুষ কি অমানুষিক পরিশ্রম করে একটু একটু করে মণ্ডপটিকে টাইম মেশিনের রূপ দিচ্ছেন।
এদিন দেখা গেলো সম্পূর্ণ মণ্ডপটিকে। একটি গোলাকার টানেল দিয়ে মূল মণ্ডপটিতে ঢুকতে হবে।ওখান থেকেই আপনার টাইম মেশিন যাত্রার শুরু। টানেল দিয়ে বেরোলেই রোবট মানবের যুগে পৌঁছবেন। এই ‘টাইম মেশিন’-এ তো আমরা পিছিয়ে যাচ্ছিনা। এগিয়ে যাচ্ছি। পুরোটাই কল্প বিজ্ঞানের খেলা। এখন থেকে আরও দু-তিনশো বছর পরে পৃথিবী চলে যাবে রোবট মানব দের দখলে। সেই ভাবনা থেকেই তৈরি হয়েছে মণ্ডপের থিম।
যাই হোক টানেল দিয়ে বেরনোর পর আপনি মণ্ডপের খোলা জায়গায় এসে পড়বেন। দুধারে ছোট-বড়-মাঝারি নানা ধরনের চাকা। সেই চাকার গায়ে যন্ত্রের ইন্সটলেশন। চাকার গায়ে আলো আঁধারের লাল, নীল, সবুজ আলো। টাইম মেশিনের যান্ত্রিক রূপটা ধরতে এই আলোগুলো তুরুপের তাস। এই চত্বরের মাঝখানে আরও একটি ইন্সটলেশন নজর কাড়বে। গুহা মানব থেকে এখনকার মানুষ ও তারপর রোবট মানব হওয়ার বিবর্তনের কাহিনী প্রাঞ্জল ভাবে ফুটে উঠেছে সেই ইন্সটলেশনে।
মণ্ডপের ভিতরে ঢোকার আগে একবার মুখ তুলে চাইতে হবে। নজরে পড়বে বিশাল একটা ঘড়ি। তার নীচে আমাদের পৃথিবী। পৃথিবীকে ধারণ করে আছে অনেক যন্ত্র মানবের হাত। পৃথিবী শাসন করার প্রতীকি রূপ? তাই-ই তো। এখানেও উজ্জ্বল লাল আলোর খেলায় একটা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এবার ঢোকা গেলো মূল মণ্ডপে। মণ্ডপের দেওয়াল জুড়ে সার্কিট বোর্ডের নকশা। বড়ো বড়ো কাঁচের জানলায় মণ্ডপ সজ্জার প্রতিফলনে চোখ ধাধিয়ে যায়। জানলার উপরে অর্ধ গোলাকার ঘূর্ণায়মান চাকা। এবার সিলিং-এর দিকে তাকালেই আসল চমক। সবুজ আলোর প্রেক্ষিতে মানুষের মস্তিষ্কের আদলে অদ্ভুত ফুশিয়া লাল আলোর পাইপের একসঙ্গে জড়ানো উপস্থাপনা। জড়ানো কিন্তু সুবিন্যস্ত। সবুজ আর লাল আলোর ব্যবহার বলে দেয় এই আলো আসলে যন্ত্র-মানবের মস্তিষ্ক। সাধারণ মানুষের নয়। এই যান্ত্রিক আবহেই স্বমহিমায় মা দুর্গা তাঁর ছেলে মেয়েদের নিয়ে বিরাজ করছেন। মণ্ডপ সজ্জার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মা দুর্গা তাঁর সনাতনী সাজ ছেড়ে, একটু অন্যরকম সেজেছেন। ম্যাজেন্টা শাড়ির সঙ্গে মন কেড়ে নেওয়া ভারী রূপোর গয়নাও পরেছেন।
তৃতীয়ার বিকেলেই মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখে মনে হলো, পুজোর অন্য দিনগুলোতেও টাইম মেশিন চড়তে আরও ভিড় জমাবেন পুজো পাগল বাঙালি।