গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ডলারের নিরিখে টাকার দাম লাগামহীন ভাবে পড়েই চলেছে। টাকার এই পতন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বিক্ষিপ্ত উদ্যোগ নিলেও কোনও ফল হয়নি। চলতি সপ্তাহেও টাকার রেকর্ড পতন হয়। এক ডলারের সাপেক্ষে টাকা এক সময় সাড়ে ৭৪ টাকা ছাড়িয়েছিল। সেই জায়গায় থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও এখনও ৭৪ টাকার উপরেই ঘোরাঘুরি করছে ভারতীয় মুদ্রা।
ডলারের দাম টাকার তুলনায় ক্রমেই চড়তে থাকায় বিদেশ ভ্রমণের খরচ বাড়ছে। বিদেশ ভ্রমণের প্যাকেজগুলি সাধারণত ডলারের নিরিখে রাখা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ব্যাঙ্কক-পাটায়া-ফুকেটের ৫-৬ দিনের বেড়ানোর খরচ মাথাপিছু ৩২২ ডলারের মত। কিন্তু তা ভারতীয় মুদ্রায় রাখা হয় না। ডলারের দামের ভিত্তিতে পেমেন্ট দেওয়া হয়।
টাকার দাম ক্রমেই পড়তে থাকায় তিন মাস আগে ভ্রমণ সংস্থাগুলির প্যাকেজ ট্যুরে ৫-৬ দিনের জন্য পাটায়া-ফুকেট বেড়াতে যেতে মাথাপিছু ভারতীয় টাকায় খরচ হত প্রায় ২২ হাজার টাকা। ভারতীয় টাকা লাগাতার পড়তে থাকায় এখন এই খরচ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ এক ধাপেই বেড়ে গিয়েছে ২ হাজার টাকা।
আমবাঙালি বিদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা মোটামুটি ২-৩ মাস আগে থেকেই করেন। বিশেষ করে দুর্গাপুজো থেকে দীপাবলির উৎসবের মরসুমে যাঁরা বিদেশে বেড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন, তাঁদের এক ধাক্কায় বাজেট অনেকটাই বাড়াতে হচ্ছে। টাকার দাম ক্রমেই পড়তে থাকায় বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতায় কোনও বদল হয় কি না তার দিকে নজর রাখছে ভ্রমণ সংস্থাগুলি। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার লো-বাজেট টুরিস্ট-সার্কিটগুলি মধ্যবিত্ত বাঙালির কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। আগে যে ভাবে বাঙালি পুরী বেড়াতে যেত, এখন কিছুটা সেই ভাবে ব্যাঙ্কক-পাটায়া-ফুকেট যাচ্ছেন।
পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তরা এই টাকার পতনের জেরে বিদেশ-ভ্রমণের খরচ কত বাড়ছে, তা নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামান না। মূলত প্রভাব পড়ে লো-বাজেট পর্যটনে, কারণ মধ্যবিত্তর বড় অংশ কম খরচে বিদেশ ভ্রমণের প্যাকেজগুলির মূল ক্রেতা। টাকার পতনের প্রভাব পড়ছে এই অংশের উপরই।
টাকার দামের লাগাতার পতনের প্রভাব এই বিদেশ ভ্রমণে পড়ছে বলে মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গ ট্র্যাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সিংহরায়। তাঁর কথায়, ‘প্রায় দু-দশক পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। টাকার এই পতন আগে কখনও দেখিনি। এর প্রভাব ব্যাঙ্কক-পাটায়ার মতো লো-বাজেট সার্কিটগুলিতে পড়ছে। এই কারণে ভ্রমণ সংস্থাগুলি যাওয়ার বিমান ভাড়া অথবা কিছু ছোটখাটো খরচ ভারতীয় টাকায় নিলেও বেশির ভাগটাই ডলারে নিচ্ছে।’ ফলে টাকার দাম কমলেও, কমছেনা ভ্রমণ খরচ।