পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে পুজো উদ্বোধন করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর আচরণে কোথাও ‘দিদির স্নেহ’ আর আন্তরিকতা। সামান্যতম অসাবধানতাও তাঁর নজর এড়াচ্ছে না। ভুল চোখে পড়লে কড়া ধমক। পরক্ষণে শুধরেও দিচ্ছেন। খুঁটিনাটিতেও তীক্ষ্ণ নজর তাঁর। দক্ষিন কলকাতার একটি পুজো মণ্ডপে ভিআইপি-দের জন্য তৈরি বড় মঞ্চ দেখে বললেন, ‘এসব না করে চলাফেরার জন্য বেশী জায়গা রাখা উচিৎ। দুজন ভিআইপি-র থেকে ২০ হাজার মানুষের গুরুত্ব বেশী। একটা ফায়ার ব্রিগেডের ইঞ্জিন আসার রাস্তা রাখতে হয়। কিছু ঘটে গেলে তখন কী হবে?’
বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘের মণ্ডপ দেখে অবাক মুখ্যমন্ত্রী। ‘এটা কী হয়েছে’? একজন কর্মকর্তা জানালেন, এবছর তাঁদের থিম আধার। কিছুটা বিরক্তি মুখ্যমন্ত্রীর গলায়, ‘আমরা আধার কার্ডের বিরুদ্ধে। এটা কেন থিম করা হল?’ এক কর্মকর্তা বোঝাতে লাগলেন, ‘থিমটা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে বোঝা যায় আমরা আধার কার্ডের বিপক্ষে’। বেশ কিছুক্ষণ মণ্ডপ খুঁটিয়ে দেখে হেসে ফেললেন মমতা। হাসতে হাসতেই বললেন, ‘পক্ষে না বিপক্ষে কিছু বোঝা যাচ্ছে না’।
অলচিকি ভাষায় মমতার লেখা কবিতার থিম এবার ভবানীপুর স্বাধীন সঙ্ঘে। এক মণ্ডপে ‘বাংলার তাঁত’ থিম দেখে খুব খুশি মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘তাঁতিরা আমাদের বাংলার গর্ব। আগে তন্তুজ, মঞ্জুষা লোকসানে চলত। এখন লাভ হয়। প্রায় ৬০০ মসলিন শিল্পীকে সাহায্য করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আমরা মেশিন দিচ্ছি। বাংলার গর্বের জিনিস দিয়ে মণ্ডপ সাজানো খুব ভালো কাজ’। ক্লাবে চাঁদা দেওয়া নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। আগেরদিনই হাইকোর্ট রাজ্য সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছে। সেকথা জানিয়ে মমতা বলেন, ‘হাজার হাজার ক্লাবকে টাকা দেওয়া হয়েছে যাতে তারা সামাজিক কাজ করতে পারে। সরকার সবসময় ক্লাবগুলির পাশে আছে। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট করে কোনও লাভ হবে না’। এদিনও বকুলবাগান, দক্ষিণ কলকাতা সর্বজনীন, গোলমাঠ, চক্রবেড়িয়া, অবসর-সহ বেশ কয়েকটি পুজো মণ্ডপের উদ্বোধন করেন। চক্রবেড়িয়ায় সম্প্রীতির থিম দেখে কর্মকর্তাদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে মমতা বলেন, ‘এটাই বাংলা। এখানে কোনও ভেদ নেই। বাংলায় আমরা সবাই একসঙ্গে থাকি। ভবিষ্যতেও থাকব’।