নারদ-নারদ। লেগে গেল মুকুল-দিলীপে। একে অপরকে দোষারোপ, কথা কাটাকাটি, বাক-বিতণ্ডা। কেন্দ্রীয় নেতারা দুই নেতার ঝামেলায় হস্তক্ষেপ না করলে জল আরও গড়াত বলেই মনে করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
মুকুল রায়ের বিজেপিতে যোগদানের সময় থেকেই দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ‘মধুর’ ছিল না। সম্প্রতি মুকুল বিজেপির লোকসভা নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়ক হওয়ায় দিলীপের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব আরও বেড়েছে। বিজেপির রাজ্য পদাধিকারী বৈঠকে সেটাই আরও একবার প্রমাণ হল। পাশাপাশি প্রকাশ্যে চলে এল বিজেপির গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব।
মুকুল রায়ের এলগিন রোডের বাড়িতেই বসেছিল বৈঠক। বিষয় ছিল ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন এবং ডিসেম্বরে রথযাত্রা কর্মসূচী। শমীক ভট্টাচার্য, প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতো রাজ্য নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ, অরবিন্দ মেননের মতো কেন্দ্রীয় নেতারাও। সেখানেই দলের বুথ স্তরের সংগঠন নিয়ে দলীয় কর্মীদের সামনেই কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়লেন দুই হেভিওয়েট নেতা দিলীপ ঘোষ এবং মুকুল রায়।
মুকুল বলেছিলেন, ‘এতদিন কী চলছিল জানি না। দলে ২০ শতাংশ বুথ কমিটিও তৈরি হয়নি। আমরা ভোটের জন্য আদৌ প্রস্তুত নই’। একথা শুনেই ফুঁসে ওঠেন দিলীপ। পাল্টা বলেন, ‘একদম বাজে কথা। আমরা প্রচুর কাজ করেছি। ৬০ শতাংশ বুথ কমিটি তৈরি আছে’। এর উত্তরে মুকুল বলেন, ‘আমার তো মনে হয় জেলায় জেলায় সংগঠন খুবই ঢিলেঢালা। ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হলে আমরা এই সংগঠন নিয়ে বিশেষ কিছু করতে পারব না’। এরপরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন দিলীপ ঘোষ। ক্ষুব্ধ স্বরে বলেন, ‘মুকুলবাবু এসব বলে দলীয় কর্মীদের মনোবল ভাঙছেন’। উত্তেজিত হয়ে পড়েন দুজনেই। একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করতে থাকেন। অবস্থা বেগতিক বুঝে কৈলাস, শিবপ্রকাশেরা মধ্যস্থতায় এগিয়ে আসেন। দুজনকেই থামিয়ে দেন তাঁরা। বৈঠকের পর এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে দিলীপ বলেন, ‘বৈঠকে অনেক কিছুই হয়। তা নিয়ে মন্তব্য করব না’। আর মুকুলের বক্তব্য, ‘আমি এবং দিলীপবাবু যে যার বক্তব্য পেশ করেছি। একে কথা কাটাকাটি বলে না’।
অন্যদিকে, ‘খুব প্রয়োজন ছাড়া ফোন করার দরকার নেই’ বলে দলীয় বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তিনি বলেছেন, দরকারে হোয়াটসঅ্যাপ কল করতে নইলে সাক্ষাতে কথা বলতে। কিছুদিন আগেই কৈলাসের সঙ্গে মুকুলের দুটি কথোপকথনের অডিও ক্লিপ নেট দুনিয়ায় ‘ভাইরাল’ হয়। একটিতে মতুয়া ভোটের দখল নেওয়া থেকে তৃণমূল ভাঙানো, ও অন্যটিতে, ম্যাথুর সঙ্গে ‘ডিল’ করে তৃণমূলকে ‘খতম’ করে দেওয়ার আলোচনা শোনা গেছে। তাই কৈলাস এমন নির্দেশ দিয়েছেন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।