বুধবার সকাল থেকেই বঙ্গোপসাগরে দানা বাঁধা ঘূর্ণিঝড় তিতলি অতি গভীর আকার ধারণ করে এগিয়ে আসতে শুরু করেছে। আজ, বৃহস্পতিবারই ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার বেগে তা আছড়ে পড়বে উড়িষ্যার গোপালপুর ও অন্ধ্রপ্রদেশের কলিঙ্গপত্তনমের মধ্যবর্তী অঞ্চলে।
তিতলির আশঙ্কা থেকেই যাত্রী সুরক্ষার জন্য তড়িঘড়ি ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে রেল। ইতিমধ্যেই কিছু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।ভার কিছু ট্রেনের যাত্রাপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার কিছু ট্রেনের সূচিতে আনা হয়েছে বদল।
রেল সূত্রের খবর, পরিস্থিতি সামাল দিতে ইমার্জেন্সি কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই স্পর্শকাতর এবং অতি স্পর্শকাতর স্টেশনগুলি বাছাই করা হয়েছে। পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ডিজেল ইঞ্জিন মজুত রাখা হয়েছে। রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তার জন্য থাকছে ওয়াগন ভর্তি বালি-সহ অন্যান্য সামগ্রী।
ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতার আশঙ্কা থেকেই ভুবনেশ্বর রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের অধীনে থাকা পরীক্ষা কেন্দ্রে রেলের পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে পরবর্তী দিনক্ষণ পরীক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেল।
রেল সূত্রের খবর, ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় বুধবার রাত ১০টার পর থেকে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত খুড়দা রোড থেকে বিজয়নগরম পর্যন্ত আপ-ডাউন দুই লাইনেই ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। হাওড়া কিংবা খড়্গপুরের দিক থেকে দক্ষিণ ভারতমুখী ট্রেনগুলিকে ইস্ট-কোস্ট রেলের এলাকা দিয়ে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তেমনই হায়দরাবাদ কিংবা বিশাখাপত্তনমের দিক থেকে উত্তরমুখী ট্রেনগুলিকে বিশাখাপত্তনম এবং খুরদা রোড দিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। হাওড়া-চেন্নাই মেন লাইন দিয়ে চলাচলকারী ট্রেনগুলিকে অন্য রুট দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রের খবর, বুধবার শালিমার-সেকেন্দ্রাবাদ এসি এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছিল। এদিন যেসব ট্রেনের যাত্রাপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়, সেই তালিকায় রয়েছে আগরতলা-বেঙ্গালুরু ক্যান্টনমেন্ট হামসফর এক্সপ্রেস, হাওড়া-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস, হাওড়া-যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের মতো ট্রেন। এদিন সূচিতে বদল করা হয় হাওড়া-চেন্নাই মেল, গুরুদেব এক্সপ্রেসের যাত্রা। এমনকি যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করে দেওয়া হয়েছিল কয়েকটি ট্রেনের।
ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণের ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, গোটা বিষয়টিই নির্ভর করছে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব, তার গতিপ্রকৃতি সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপরে। সেসব বিবেচনায় এনে ট্রেন চালানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বুধবার যেসব ট্রেন নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল, তা একেবারেই যাত্রীদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে। সেভাবেই আজ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রেলের এক কর্তা বলেন, আমাদের দু’টি বিষয়কে একইসঙ্গে মাথায় রাখতে হচ্ছে। প্রথমত, যাত্রীদের সুরক্ষা। দ্বিতীয়ত, যাত্রীদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেওয়া। তার জন্যই একতরফা ট্রেন বাতিল করা হয়নি। কিছু ট্রেন ঘুরিয়ে দিয়ে, কিছু ট্রেনের সূচিতে বদল এনে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হয়েছে। একইসঙ্গে ঝড়ের মোকাবিলায় ডিজেল ইঞ্জিন মজুত রাখা হয়েছে। ওভারহেডের তার ছিঁড়ে গেলে ওই ইঞ্জিন ব্যবহার করে ট্রেনকে টেনে নিয়ে যাওয়া যাবে। কোথাও ঝড়-বৃষ্টিতে লাইন উপড়ে গেলে দ্রুত পরিস্থিতির মোকাবিলায় বালি বা অন্যান্য সামগ্রী মজুত রাখা হচ্ছে। গোটা পরিস্থিতির উপরে নজরদারির জন্য বিশেষ কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। ৮৪৫৫৮৮৫৯৩৬, ০৬৭৪–২৩০১৫২৫, ০৬৭৪–২৩০১৬২৫, এই নম্বরগুলিতে ফোন করলেই জানা যাবে বিভিন্ন ট্রেনের গতিবিধি এবং ট্রেন বাতিলের খবর।