বাঙালির পাত নাহয় মাছ ছাড়া অসম্পূর্ণ। তাই বলে দেবতার ভোগেও মাছ! হ্যাঁ, অবাক হওয়ার কিছু নেই। পুরাণ বলছে, আমিষেও রুচি আছে দেবদেবীদের। তাই বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দির কিংবা চিল্কিগড়ের দেবী কনকদুর্গার মন্দিরে দুর্গার পাতে পড়ে প্রমাণ সাইজের শোল ও মাগুর। রীতি মেনেই দেবীকে দেওয়া হয় মাছের ভোগ।
দেবীর ভোগের পদ এবার সর্বসাধারণকে পুজোর সময় খাওয়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগম। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘দেবীর ভোগ’। গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে পুজোর সময় বাঙালির প্রিয় বিভিন্ন পদ খাওয়ানোর উদ্যোগ নিয়ে থাকে নিগম। সেই সঙ্গে থাকে কিছু চমক। এবছর নিগমের চমক হল, দুই বঙ্গের পুজোতে দেবীকে যেভাবে ভোগ দেওয়া হয়, সেই পদগুলি একই রকমভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৌম্যজিৎ দাস বলেন, বাঙালির বিভিন্ন প্রিয় খাবারের পশরা নিয়ে তাঁরা প্রতিবছর রেঁস্তোরা ছাড়াও বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে পৌঁছে যান। সেই সঙ্গে থাকে কিছু কিছু চমকদারি রান্নার পদ। এবছর অবশ্য একটা নয়, চমক রয়েছে দুটি। প্রথম চমক, উৎসব মরশুম হিসেবে ইতিমধ্যে সপ্তাহান্তে বুফেতে ছ’রকম মাছ খাওয়ানো শুরু হয়ে গিয়েছে। আর দ্বিতীয় চমক, পুজোর সময় দেবীর ভোগের পদ খাওয়ানোর উদ্যোগ।
তিনি আরও বলেন যে, দেবীর ভোগের যে প্যাকেজ করা হচ্ছে সেটা হচ্ছে ৩৫০ টাকার। এতে থাকছে, পূর্ববঙ্গের ব্রাহ্মণবেড়িয়ার জমিদার রায়বাড়ির দেবীর জন্য তৈরি ভোগ মোহন পোলাও। অন্য পোলাওয়ের মতোই এখানেও কাজু, কিসমিস দেওয়া হয়। তবে রায়বাড়ির মোহন পোলাওয়ের বিশেষত্ব হচ্ছে, ছোট ছোট ছানার বল। সেখানকার পুজোতে এই ভোগ দিয়েই মাকে পুজো করা হয়। সেই সঙ্গে ভোগ দেওয়া হয় বেগুন ভাজা, পায়েস। তাই নিগমের প্যাকেজেও সেই ব্যবস্থা থাকছে।
দ্বিতীয় ভোগের পদে থাকছে, বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা দেবীর ভোগ। যা আসলে মাগুর মাছের টক। সৌম্যজিৎবাবু জানিয়েছেন, সর্বমঙ্গলা দেবীকে যেভাবে রান্না করে ভোগ প্রদান করা হয়, তাঁদেরও সেই একইভাবে রান্না করা হবে। দেবীর ভোগের তৃতীয় পদে থাকছে, চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা মন্দিরের শোল পোড়া। সেখানকার মতোই এখানেও মাটির সরায় করে এই রান্না পরিবেশন করা হবে।
সৌম্যজিৎবাবু আরও জানান, সপ্তাহান্তের ৩৯৯ টাকার ছটি মাছের বুফে ইতিমধ্যেই চালু হয়ে গিয়েছে নলবন, নবান্ন, ইকো পার্কে নিগমের রেঁস্তোরাগুলিতে। তবে ৩৫০ টাকায় দেবীর ভোগ খাওয়ানোর ব্যবস্থা থাকছে পঞ্চমী থেকে একাদশী পর্যন্ত। এবং তা শুধু নিগমের রেঁস্তোরাতে নয়, কলকাতা শহরের বিভিন্ন বড় বড় পুজো মণ্ডপ এবং অ্যাপেও দেবীর ভোগ পাওয়া যাবে। নিগমের ‘স্মার্ট ফিশ’ অ্যাপ ডাউনলোড করলে তিন রকম মাছের থালি সহজেই মিলবে। এমনকি ক্রেতাদের জন্য থাকছে নানারকম ছাড়ের ব্যবস্থা।
নিগমের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পঞ্চমীর দিন থেকে ৬৬ পল্লি, সিংহী পার্ক, কালীঘাট মিলন সংঘ, হাজরা, নেবুতলার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার, কুমারটুলি সর্বজনীন, টালা বারোয়ারি, জগৎ মুখার্জি পার্ক এবং শ্রীভূমির মত শহরের ২৩টি বড় পুজো মণ্ডপ চত্বরে নিগমের স্টল থাকছে। তবে শুধু কলকাতাতেই নয়, এবার সুদূর আমেদাবাদের বাঙালিদের পুজোতেও দেবীর ভোগ পরিবেশন করা হবে বলে জানা গেছে।