বিকো লরি, ন্যাশানাল জুট ম্যানুফ্যাকচার্স কর্পোরেশন লিমিটেডও তার অনুসারী সংস্থা বার্ড জুট অ্যান্ড এক্সপোর্ট লিমিটেড বন্ধ করার সিদ্ধান্তে সীলমোহর লাগিয়ে দিল। এনজেএমসি-র মোট ৬ টি চটকলের ৫ টিই বাংলায়। অন্যটি বিহারের কাটিহারে। পুজোর আগে এটাই মোদী সরকারের উপহার বাংলাকে। কংগ্রেস আমলে তৈরি এই কর্পোরেশন গত কয়েক বছর ধরেই ধুঁকছিল। প্লাস্টিকের সঙ্গে দৌড়ে ক্রমশই পিছিয়ে পড়া চটের ব্যাগের চাহিদা এমনিতেই গ্রাস পেয়েছিল। বেসরকারি জুট মিলের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছিল উৎপাদনের নিরিখে। মোদীর সরকার তাই পাকাপাকি ভাবে তালা ঝুলিয়ে দিল। তাদের যুক্তি, তিনটি সংস্থার পেছনে খরচ করে ক্ষতির বোঝাই টানতে হচ্ছে। বরং এই সংস্থাগুলির কাছে যে জমি ও অন্য পরিকাঠামো রয়েছে তা বিক্রি করে যেটাকা পাওয়া যাবে, তা দিয়ে যাবতীয় দায় মেটানো হবে। বাকি টাকা জমা পড়বে সরকারি কোষাগারে।
কিন্তু একসময় জুট মিলগুলোর বৈভব ছিল গল্পকথার মতো। সে সময় কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধে দেওয়া হত ষোলআনার ওপর আঠারোআনা। যে কোনও অনুষ্ঠানে ঢালাও পার্টি, সপ্তাহান্তে সিনেমা শো, শহরের কেন্দ্রস্থলে যাওয়ার জন্য নিয়মিত গাড়ি – মিলত সব সুবিধাই। কিন্তু একে একে নিভেছে দেউলের সব আলো। পুরনো জমিদার বাড়ির মতোই ঝড়ে পড়েছে জুট মিলগুলির স্বাস্থ্য। আর এবার পুজোর মুখে সেগুলো বন্ধই করে দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
আসলে মোদীর মতো ব্যবসায়ীপ্রেমীদের লক্ষ্য ছিল একটাই। সেটা, টাকা কামানো। মান্ধাতা আমলের মেশিনপত্র বা পরিকাঠামোর উন্নতির দিকে তাদের কোনও লক্ষ্যই ছিল না। তখনও চটের ব্যাগের বাজার ছিল উর্ধ্বমুখী। কিন্তু ওদের পাখির চোখ ছিল মুনাফা লোটার দিকেই। এদের সঙ্গে হরিহর আত্মার মতো সেঁটে গিয়েছিল সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিআইটিইউ বা সিটু। সেইসময়ে হুগলি নদীর দুপাড় ধরে ছিল একের পর এক জুট মিল। সিপিএম ক্ষমতায় আসার পর এদের ওপর থাবা বসায় | দুই ধান্দাবাজের মিলন ঘটে। যাকে বলে, বিজেপির হস্তক্ষেপে ষোলোকলা পূর্ণ হল।
পুরনো যন্ত্রপাতি, পুরনো পরিকাঠামো বদলের কোনও চেষ্টাই করেনি কেন্দ্রের মোদী সরকার। বাম আমলে সিপিএম-ও গা করেনি। আধুনিক যন্ত্রে যেখানে শ্রমিক সংখ্যা আয়ত্তে আনা যেত, চটের ব্যাগের চাহিদার মোকাবিলা করতে বিকল্প উৎপাদন শিল্প নিয়ে ভাবা যেত। কিন্তু তার বদলে ম্যানেজমেন্টের দাবি বারবার উপেক্ষা করে গেছে কর্তাব্যক্তিরা। শ্রমিক সংগঠন সিটু কোনও কথা বলেনি। তারা কী করে দাঁও মেরে টাকা নেবে সেই ধান্দাতেই আগাগোড়া ছিল। ম্যানেজমেন্টের খেয়ে, তাদেরই গাল দিয়ে একটা শ্রমিক দরদী মুখোশ পড়ে থাকাই বাম-রামেদের মূল উদ্দেশ্য।