হঠাৎই থেমে যায় পুজোর বাদ্যি। ঢাকের কাঠিরা যেন মৌন ব্রত পালন করে নেয় খানিকটা সময়। তখনই দূর থেকে ভেসে আসে নামাজের শব্দ। বাইরের লোকেরা অবাক হলেও, স্থানীয়রা কিন্তু বেশ জানেন, কোনও সমস্যা নয়, আসলে বরাবরের মতই সসম্মানে রক্ষিত হল সমন্বয়ের মন্ত্র।
গত ৪৫ বছর ধরে এমনই হয়ে আসছে মোমিনপুর তরুণ সংঘের পুজোয়। যে মাঠে দুর্গাপুজো হয়, ওই মাঠ ‘হুসেন শাহ পার্ক’ নামেই বেশি পরিচিত স্থানীয়দের কাছে। সারা বছর ওই মাঠেই নামাজ পড়েন এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। পুজোতেও তার ব্যতিক্রম হয় না। তাই নামাজের সময় এলেই ঢাক বাজানোয় সাময়িক বিরতি পড়ে। নামাজের প্রার্থনা শেষ করে এসে শেখ সুলতান ও জাহাঙ্গির হুসেনরা, নিজ হাতেই তুলে নেন ঢাকের কাঠি।
স্রেফ হিঁদুর পুজো নয়, এ এক উৎসব- এমনটাই মনে করেন এ’পাড়ার বাসিন্দারা। তাই জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পাঁচটা দিনের আমেজ চুটিয়ে উপভোগ করার কোনও সুযোগই হাতছাড়া করেন না তাঁরা। এক্ষেত্রে পাড়ার বাসিন্দাদের সামনে নজির গড়েছেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম মহম্মদ আশরাফ।
সারা বছর এলাকার মানুষজনকে এই হুসেন শাহ পার্কে বসেই তিনি কখনও পরিবেশরক্ষা, কখনও সব ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রয়োজনীয়তা, আবার কখনও বা নেশার অপকারিতার বিষয়ে সচেতন করার কাজ চালান। মহম্মদ আসরাফ বলেন, ‘চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এমনটাই হয়ে এসেছে এই পাড়ায়। ভবিষ্যতেও এমনই হতে থাকবে। একটা উৎসবে যদি সবাই সামিল না হতে না পারে, তবে তা উৎসব হয়ে ওঠে না। আমরা এই পাড়ার বাসিন্দারা চাই এভাবেই উৎসব করতে।’
শেখ সুলতান, জাহাঙ্গির হুসেনরা বহু বছর ধরেই তরুণ সংঘের পুজোর সঙ্গে জড়িত। তাঁরা বললেন, ‘পুজোর দিনগুলোয় পাড়ার ছোটরা মিলে নানা ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তো করেই, সবচেয়ে ভালো লাগে দশমীর সিঁদুরখেলা। ওই সময় উৎসবের আসল মানেটা বোঝা যায়।’ পাড়ার বাসিন্দা এবং পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা রৌশন আলি জানালেন, প্রতিবছরই মহালয়ার পর কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা নিয়ে আসা হয়। তারপরই উৎসবে মেতে ওঠে গোটা পাড়ার মানুষ।