পুজো মানেই ‘বাম্পার’, পুজো মানেই ‘ছাড়’ কিংবা ‘বিশেষ অফার’। কারণ সকলেই পুজোকে টার্গেট করে, বাজার ধরার চেষ্টা করে। ফলে পুজোর মুখে বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির মধ্যে জোরকদমে চলছে ছাড়-যুদ্ধ। এবার সে যুদ্ধে সামিল হল দুটি বৃহত্তম ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।
১০-১৪ অক্টোবর ফ্লিপকার্টের ‘বিগ বিলিয়ন ডে’ সেলের জবাবে দিতে এককাঠি এগিয়ে একদিন বেশি ছাড় দিচ্ছে প্রবল প্রতিপক্ষ অ্যামাজন, ১০-১৫ অক্টোবরে তাদের ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান ফেস্টিভ্যালে’।
সরকারি ভাবে স্বীকার না করলেও, গত কয়েক বছরের তথ্য বলছে, দুই সংস্থারই এই ধরনের ছাড়ে প্রায় অর্ধেক আয় হয় স্মার্টফোন বেচে। হবে নাই বা কেন? ক্রেতারা যদি জানতে পারেন ফ্লিপকার্টের সেলে ৬২% অবধি ছাড়ে মিলবে বিভিন্ন সংস্থার স্মার্টফোন, তাহলে বিক্রি তো বাড়বেই।
কপাল ভালো থাকলে পুজোয় আপনার হাতেও থাকতে পারে স্যামসাং-এর সাম্প্রতিকতম মডেল স্যামসাং ‘গ্যালাক্সি এস এইট’, যা ফ্লিপকার্টের সেলে মিলছে অবিশ্বাস্য ২০,০০০ টাকা ছাড়ে। এমনকি ৪৯,৯৯০ টাকার ঝাঁ চকচকে ‘প্রিমিয়াম’ মডেল মাত্র ২৯,৯৯০ টাকায় পেতে পারেন আপনি। গ্যালাক্সি ‘অন নেক্সট’, ‘অন সিক্স’ মডেলও মিলবে এমন দামে, যা এ যাবৎ কখনও মেলেনি।
একই ভাবে প্যানাসনিক তাদের ৪জি স্মার্টফোন ‘পি নাইন্টিওয়ান’ ৬২ শতাংশ ছাড় দিয়ে ২,৯৯০ টাকায় কেনার সুযোগ দিচ্ছে ক্রেতাদের, যা এখন ৩,৯৯৯ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে অ্যামাজনে। এই ফ্ল্যাশসেলে স্যামসাং-প্যানাসনিকের স্মার্টফোনের পাশাপাশি অনেক কম দামে পেতে পারেন মোটো ‘জেড টু ফোর্স’ (৩৪,৯৯৯ টাকার ফোন ১৭,৪৯৯ টাকায়), মোটো ‘জেড ২ প্লে’ (২৭,৯৯৯ টাকার ফোন ৯,৯৯৯ টাকায়) এর মতো একাধিক সংস্থার ফোন। চিনা সংস্থা হুয়াওয়েই এর অনার ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনেও মিলছে ৫০০-৮,০০০ টাকা অব্দি ছাড়। ওপ্পো, এলজি-সহ আরও একাধিক সংস্থার ফোনেও মিলবে প্রচুর ছাড়।
সরকারি ভাবে এত বড় অঙ্কের ছাড়ের কথা না জানালেও ওয়ানপ্লাস ‘সিক্স’ (৩৪,৯৯৯ টাকার ফোন ২৯,৯৯৯ টাকায়) এর পাশাপাশি হুয়াওয়েই এর নোভা ‘থ্রি আই’, মোটো ‘ই ফাইভ প্লাস’ এবং শাওমি এমআই ‘এ টু’ সর্বনিম্ন দামে তাদের ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান ফেস্টিভ্যালে’ দেওয়ার কথা জানিয়েছে অ্যামাজন। পাশাপাশি ৪০% অবধি ছাড়ে পাওয়া যাবে ওয়ান প্লাস, আইফোন, শাওমি, স্যামসাং, মোটোরোলা, লেনোভো, অনর, এলজি, ব্ল্যাকবেরি, নোকিয়ার মতো নামী সংস্থার একাধিক মডেল। সঙ্গে থাকছে নো-কস্ট এ-এম-আই এবং এক্সচেঞ্জ অফারও।
বিশেষজ্ঞদের মত, এ হেন পরিস্থিতিতে লড়াইটা হচ্ছে অন্য মঞ্চে। যেখানে দুই ই-কমার্স জায়ান্ট নিজেদের ছাতার তলায় টানতে চাইছে নামী মোবাইলপ্রস্তুত কারক সংস্থাগুলিকে। গোটা সংস্থা না হলেও জনপ্রিয় মডেল ধরে ধরেও এ ভাবে নিজেদের প্ল্যাটফর্মের বিক্রি ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির বাড়ানোর সুযোগ ছাড়তে চাইছে না কেউই।
অ্যামাজন ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর (ক্যাটেগোরি ম্যানেজমেন্ট) নুর প্যাটেল জানিয়েছেন, শাওমি-ওয়ানপ্লাস-স্যামসাং এর মতো নামী সংস্থার প্রায় ১৮,০০০ মডেল শুধুমাত্র তাঁদের প্ল্যাটফর্মে এনে চলতি বছরে গত বছরের বিক্রির দেড়গুণ বিক্রির সম্ভাবনা দেখছেন তাঁরা। তাঁর দাবি, ভারতে স্মার্টফোনের বাজার এত বড়, যে বেশি সংখ্যক মডেল হাতে থাকলে সামগ্রিক ভাবে সংস্থার সঙ্গে চুক্তি না থাকাকে সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
গ্রাহকদের সুবিধার্থে এ বার ‘কার্ডলেস ক্রেডিট’ এর সুবিধাও দিতে চলেছে ফ্লিপকার্ট-অ্যামাজন দুই সংস্থাই। যার জোরে ক্রেডিট কার্ড ছাড়াই ৬০,০০০ টাকা অবধি ধারে কিনে তা ৩-১২ মাসে মেটানোর সুবিধা পেতে চলেছেন গ্রাহক। বর্তমানে ইনস্টলমেন্টে ধার মেটানোর সুবিধা শুধু ক্রেডিট কার্ডধারীরাই পেয়ে থাকেন। নতুন এই ব্যবস্থায় ডেবিট কার্ডের মাধ্যমেও ইনস্টলমেন্টের সুবিধা পাওয়া যাবে।
ফ্লিপকার্টের ‘বাই নাউ, পে লেটার’ স্কিমে গ্রাহকের পূর্বের কেনাবেচার ইতিহাস বিচার করে ৬০,০০০ টাকা অবধি ‘ধার’ দেওয়া হবে। ফ্লিপকার্টের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপেই কেবলমাত্র এই সুবিধা পাওয়া যাবে। যেখানে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য, যেমন নাম-প্যান-আধার নম্বর দিয়ে ধারের জন্য আবেদন করতে হবে।
একই সুবিধা দিচ্ছে অ্যামাজনও। যেখানে ‘অ্যামাজন পে’-র মধ্যে আধার-প্যান জাতীয় তথ্য এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দিয়ে নাম নথিভুক্ত করে, ‘ধার’-এর জন্য আবেদন করতে হবে। ধার মঞ্জুর হওয়ার পর কেনার সময় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংযুক্ত করে দিতে হবে। যাতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেখান থেকে টাকা অ্যামাজনের কাছে চলে যায়।
পুজোয় দুই সংস্থার সেলের এই মহারণে লাভবান হবেন আসলে ক্রেতারাই। ফলে এখন থেকেই সকলের নজর ফ্লিপকার্ট-অ্যামাজনের অ্যাপে।