বিগত কয়েক বছর ধরে চতুর্থী থেকেই মানুষের ঢল নেমে যায় মহানগরীর বুকে। শুরু হয়ে যায় পুজো দেখার হিড়িক। তাই এবছর চতুর্থীর বিকেল থেকেই পুজোর ভিড় সামলাতে মাঠে নামছে কলকাতা পুলিশ।
লালবাজার থেকে সদ্য প্রকাশিত হয়েছে ৩২২ পাতার পুজো-নিরাপত্তা সংক্রান্ত পুস্তিকা। সেখানেই উল্লেখ রয়েছে, উৎসবের দিনগুলিতে মূলত দর্শনার্থীদের ভিড় সামাল দেওয়া বা ‘ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট’ করাই পুলিশের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি, জরুরি পরিষেবা প্রদান বা ভিড়ের মধ্যে হওয়া অসামাজিক কার্যকলাপ দমনের মত কাজ তো আছেই।
এবার পুজোর ‘ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট’ লালবাজারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ মাঝেরহাট ব্রিজ বিপর্যয়ের পর এমনিতেই বেহালা, নিউ আলিপুর, চেতলা এলাকায় যানজট সামাল দিতে কালঘাম ছুটছে কলকাতা পুলিশের সার্জেন্টদের। প্রসঙ্গত, এই এলাকাতেই রয়েছে কলকাতার বেশ কয়েকটি হেভিওয়েট পুজো।
সুরুচি সঙ্ঘ, চেতলা অগ্রণী ও বেহালা নতুন দলের মত আকর্ষণীয় পুজোগুলোয় প্রতিবারই নজরকাড়া ভিড় হয়। ব্রিজ বিপর্যয়ের ফলে এবার বিকল্প রাস্তাগুলিতেও উপচে পড়বে অতিরিক্ত ভিড়। সেই চাপ সামাল দিতে হবে পুলিশকে। যদিও বেইলি ব্রিজ পুজোর মধ্যেই চালু হয়ে যেতে পারে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। ফলে সব দিক মাথায় রেখেই যান চলাচলের কৌশল তৈরি করতে হচ্ছে লালবাজারকে।
বছর দু’য়েক আগে পঞ্চমীর দিনে দেশপ্রিয় পার্কের দুর্গাপুজো গোটা কলকাতাকে অচল করে দিয়েছিল। কল্পনাতীত থাকায় সেবার ‘ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট’-এর সুযোগই পায়নি পুলিশ। তৎকালীন পুলিশ কমিশনারকে মেট্রোতে চেপে ছুটতে হয়েছিল দেশপ্রিয় পার্কে। তারপর থেকেই ভিড়ের নিরিখে একাধিক নামী-দামি পুজোকে পিছনে ফেলে দিয়েছে দেশপ্রিয় পার্ক। সেকথা মাথায় রেখেই এখন থেকে ঘুঁটি সাজাচ্ছে লালবাজার। দেশপ্রিয় পার্কের পুজোকে মোট চারটি জোনে ভাগ করেছে লালবাজার। যার প্রতিটি জোনের দায়িত্বে থাকবেন একজন করে ডিসি পদমর্যাদার আইপিএস অফিসার।
পুজোর দিনগুলিতে অপরাধ দমনে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ২৫টি ডিভিশনাল মোবাইল ভ্যান, ২৫টি হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড, ৩০টি র্যা পিড সিটি প্যাট্রল, ১৩টি কুইক রেসপন্স টিম বা কিউআরটি টহল দেবে। পুজোর দিনগুলিতে অতিরিক্ত কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে লালবাজারে। যার দায়িত্বে থাকছেন কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার-৩ তথা যুগ্ম কমিশনার সদর সুপ্রতিম সরকার। এছাড়াও যাদবপুর, বেহালা, টালিগঞ্জ থানার পাশাপাশি সুকিয়া স্ট্রিটে ডিআরও নর্থ অফিসে রিজার্ভ বাহিনী যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে।
কলকাতার বড় বড় পুজোগুলির ভিড় সামলাতেই প্রতিবার হিমশিম খেতে হয় পুলিশকর্তাদের। ফলে এবছরও সেইসব ‘হেভিওয়েট’ পুজোগুলির মণ্ডপ ও সংলগ্ন এলাকায় জমাট ভিড় হবে ধরে নিয়েই নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। সেইসব এলাকায় ৭৪টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসাচ্ছে পুলিশ। এরমধ্যে ২৫টি আগে থেকেই রয়েছে। বাকি ৪৯টি পুজো উপলক্ষ্যে নতুন করে বসানো হচ্ছে। পাশাপাশি, গোয়ালিয়র ঘাট, নিমতলা ঘাট, দই ঘাট, বিচালি ঘাটের মতো গঙ্গার ঘাটগুলিতে বিসর্জন পর্বের কথা ভেবে ১৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। সবমিলিয়ে এবার আটঘাট বেঁধেই পুজোর মরশুমে পথে নামছে পুলিশ।