প্রোমোটার-রাজের শিকার এবার অবন ঠাকুর! খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী এবং লেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত বাগানবাড়িটি এখন প্রোমোটারের দখলে। কীভাবে এমন একটি ঐতিহ্যবাহী বাড়ি প্রোমোটারের হাতে গেল, তা নিয়ে অন্ধকারে সকলেই।
২০০৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন বাড়িটিকে তাদের তালিকাভুক্ত করে। তারপরেও কীভাবে বাড়িটি বিক্রি হয়ে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিস্মিত স্থানীয় পুর-প্রশাসন। তবে বাগানবাড়িটি রক্ষা করতে সম্প্রতি তৎপর হয়েছে কোন্নগর পুরসভা। একইসঙ্গে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে একজোটে ময়দানে নেমেছেন শহরবাসী। তাঁদের দাবি, ওই বাগানবাড়িতে আর্ট গ্যালারি বা শিল্পচর্চা কেন্দ্র গড়ে তোলা হোক।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়িটি কোন্নগর পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর মিরপাড়া লেনে। প্রায় সাড়ে ন’বিঘা জমিতে আম, জাম, তাল, জামরুল, কাঁঠাল গাছে ঘেরা ধূসর গোলাপি রঙের এই বাড়ি। রাজ্য শিশু কিশোর আকাদেমির সদস্য এবং অবনীন্দ্র-গবেষক কোন্নগরের ড. পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অবনীন্দ্রনাথের ছোটবেলার অনেকটা সময় এই বাড়িতে কেটেছে। এখানেই তিনি প্রথম ছবি এঁকেছিলেন। তাঁর ‘জোড়াসাঁকোর ধারে’ বইয়েও উল্লেখ রয়েছে গঙ্গাতীরের এই বাগানবাড়ির। এ’বাড়ি রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
বাম আমলে বাড়িটির হস্তান্তর হয়েছে, দাবি করেছেন কোন্নগর পুরসভার চেয়ারম্যান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ২০১০ সালে তৃণমূল কংগ্রেস পুরসভায় বোর্ড গড়ে। তার পরেই বিষয়টি পুরসভার নজরে পড়ে। এক কোটি দশ লক্ষ টাকায় বাড়িটি কিনেছেন সতীশচন্দ্র লাখোটিয়া নামে এক ব্যবসায়ী। বিষয়টি জানার পরেই পুরসভার তরফে ব্যবসায়ীকে টাকা মিটিয়ে বাড়ি ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
বলা হয়েছিল, পুরসভাকে দিতে আপত্তি থাকলে, রাজ্য বা কেন্দ্র সরকারকে বাড়িটি হস্তান্তর করতে। ব্যবসায়ী রাজি হননি। তিনি উল্টে হাইকোর্টে মামলা করেন। আদালত অবশ্য বিষয়টি স্থানীয় স্তরে আলোচনা করে মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, কোনও ভাবেই ওখানে বহুতল নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে জনমত গড়ে ঐতিহ্যকে রক্ষা করা হবে। পুরসভা হেরিটেজ কমিশনকে চিঠিও দিয়েছে।
ব্যবসায়ী সতীশ লাখোটিয়ার দাবি, বাড়িটি তিনি আগে কিনেছেন, তার পর সেটি হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। তাই তাঁর কিছুই করার ছিল না। শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওই বাড়ি যেমন আছে তেমনই থাকবে। তিনি বলেছেন, হেরিটেজ ঘোষণা করার পরে কোনও বাড়ি কেনাবেচা করা যায়না। বিষয়টা পুরোপুরি বেআইনি।
উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল জানিয়েছেন, ওই বাগানবাড়ির সঙ্গে কোন্নগর তথা বাঙালির আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। প্রোমোটারের হাত থেকে বাড়িটিকে রক্ষা করার জন্য পুরসভার প্রচেষ্টাকে তিনি সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি নিজেও বিষয়টি নিয়ে তৎপর। গোটা বিষয়টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছেন। পাশাপাশি বাড়িটিকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট সমস্ত সরকারি বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছেন।
উল্লেখ্য, ৭ আগস্ট অবনীন্দ্রনাথের জন্মদিনও পালিত হয়েছে তাঁর এই বাগানবাড়িতে। মহালয়ার দিনও ওই বাগানবাড়িতে একটি অনুষ্ঠানে দুঃস্থ শিশুদের বস্ত্রদান করা হবে।