ক্ষুব্ধ কৃষকদের বিক্ষোভ ও আন্দোলনে উত্তাল হল উত্তরপ্রদেশ-দিল্লি সীমান্ত। আন্দোলনরত কৃষকদের উপর চলল জলকামান। ছোঁড়া হল কাঁদানে গ্যাস। ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন আয়োজিত ‘কিষাণ ক্রান্তি যাত্রা’য় অংশ নেওয়া কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জও করেছে বলে অভিযোগ।
মঙ্গলবার হাজার হাজার কৃষকের মিছিল দিল্লির সীমানায় পৌঁছতেই পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়। মিছিলে ট্রাক্টর এবং গাড়িও ছিল। অভিযানকারীদের দিল্লি সীমান্তে আটকাতে পুলিশ ব্যারিকেড লাগিয়ে দেয়। কৃষকরা ব্যারিকেড ভেঙে ঢুকতে গেলে তাঁদের উপর প্রবল গতির জলকামান চালায় পুলিশ। ছোঁড়া হয় কাঁদানে গ্যাসও। এমনকি এলোপাথারি লাঠিও চালাতে দেখা যায় পুলিশকে। যার জেরে কয়েকজন কৃষক নেতা-প্রতিনিধি আহত হন। এতে আন্দোলনকারীরা আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। ২ অক্টোবর গান্ধীজির জন্মদিন। এই অহিংসা দিবসেও হিংসা ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। সরকার অবশ্য প্রথমটায় কড়া হলেও দিনের শেষে সুর নরম করতে বাধ্য হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে, সরকারের তরফে তড়িঘড়ি আন্দোলনরত কৃষক প্রতিনিধিদের বৈঠকেও ডাকা হয়। বৈঠকে কৃষি ঋণ মকুব, ডিজেলের দাম কমানো, জিএসটির হার কমানো, সস্তায় সার এরকম বেশ কিছু বিষয় নিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা আলোচনা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, লোকসভা ভোটের আগে আর নতুন করে আন্দোলন না করে, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করার অনুরোধ করেন। যদিও কৃষক প্রতিনিধিরা তা খারিজ করে দিয়েছেন। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, আশ্বাসে ভুলছি না। আন্দোলন চলবে।
মূলত পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠ কৃষকদের সংগঠন ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন-এর দাবি, স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ কার্যকর করা, ফসলের ন্যায্য মূল্য দেওয়া, কৃষিঋণ মকুব, ৬০ বছরের বেশি বয়সের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের পেনশনের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে উত্তরপ্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকদের নিয়ে হরিদ্বারের টিকায়েত ঘাট থেকে শুরু হয় কিষাণ ক্রান্তি পদযাত্রা। পদযাত্রা শেষ হওয়ার কথা ছিল দিল্লির কিষাণ ঘাটে চরণ সিংয়ের সমাধিস্থলে। কিন্তু মিছিল দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশ সীমানায় পুলিশ হঠাৎই বাধা দেয়, ফলে কৃষকদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধে। চালানো হয় লাঠি। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের সেল। ব্যবহার করা হয় জলকামান। লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছেন অনেকে। তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ইউনিয়নের সভাপতি নরেশ টিকায়েত সাংবাদিকদের বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ মিছিল কেন আটকানো হল? সরকারকে যদি কৃষকদের সমস্যার কথা বলতে না পারি, তাহলে কাকে বলব? তবে কি আমরা পাকিস্তান বা বাংলাদেশে গিয়ে আমাদের সমস্যার কথা বলব?’ ইতিমধ্যেই কৃষকদের মিছিল আটকানোর ও পুলিশের আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছে বিরোধী দলগুলি। বিশ্ব অহিংসা দিবসে শান্তিপূর্ণভাবে আসা কৃষকদের মিছিলের ওপর যেভাবে বর্বর হামলা চালালো বিজেপির সরকার, তাতে একপ্রকার গান্ধী জয়ন্তীর অবমাননাই করা হল।