গত ২৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে বলা হয়েছিল মোবাইল সংযোগ কিংবা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আধার সংযোগ বাধ্যতামূলক নয়। সেই রায়ের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রকের নির্দেশে আধার কর্তৃপক্ষ তথা ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন সংস্থার (ইউআইডিএআই) পক্ষ থেকে এক নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে দেশের বিভিন্ন মোবাইল সংস্থাগুলিকে। ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী সমস্ত মোবাইল সংস্থাকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে স্থির করতে হবে তারা সংযোগ প্রদানের সময় কিংবা পরবর্তী সময়ে গ্রাহকদের যে আধার নম্বর নিয়ে তথ্যভাণ্ডারে প্রতিটি গ্রাহকের যে ব্যক্তিগত নথি সংরক্ষিত করে রেখেছে, এবার সেই তাবৎ তথ্য ও নথি সম্পূর্ণ বিযুক্ত করবে কীভাবে! অর্থাৎ হাতে আর মাত্র দু’সপ্তাহ। এই ক’দিনের মধ্যেই মোবাইল সংস্থাগুলিকে জানাতে হবে তাদের তথ্যভাণ্ডারে থাকা গ্রাহকদের আধার নথি বিচ্ছিন্ন করার সমগ্র প্রক্রিয়া তথা পরিকল্পনা। ওই পরিকল্পনা প্রযুক্তিগতভাবে খতিয়ে দেখবে আধার কর্তৃপক্ষ।
মোবাইল সংস্থাগুলির পরিকল্পনা খতিয়ে দেখতে রয়েছে বিশেষজ্ঞ টিম। সেই বিশেষজ্ঞ টিম যদি সন্তুষ্ট হয় যে মোবাইল সংস্থাগুলির প্রক্রিয়া পালন করার পর সম্পূর্ণভাবে প্রতিটি মোবাইল গ্রাহকের আধার নথি মোবাইল সার্ভিস প্রভাইডারদের তথ্যভাণ্ডার থেকে সম্পূর্ণ মুছে যাবে, তাহলেই ওই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এবং তারপর একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে বলা হবে মোবাইল সংস্থার তথ্যভাণ্ডার থেকে ওই সময়ের মধ্যেই গ্রাহকদের আধার নথি সরিয়ে দিতে হবে। উল্লেখ্য, এই ব্যবস্থা কার্যকর করার পাশাপাশি প্রতিটি মোবাইল সংস্থাকে নতুন মোবাইল সংযোগের ক্ষেত্রে বিধিনিয়ম সম্পূর্ণ পালটে ফেলতে হবে। কারণ আগামীদিনে যে কোনও মোবাইল সংযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে আবার সেই চিরাচরিত পেপার ডকুমেন্টেই ফিরতে হবে। অর্থাৎ সচিত্র পরিচয়পত্র, ঠিকানার প্রমাণপত্র ইত্যাদি।
জিও সংস্থার মতো সার্ভিস প্রভাইডারের ক্ষেত্রে নিজেদের আমূল ব্যবস্থাটাই বদলে ফেলতে হবে। কারণ জিও সংস্থার সংযোগ এক এবং একমাত্র আধার সংযুক্তিকরণ তথা অথিনটিকেশনের মাধ্যমেই পাওয়া যায়। পেপার নথির কোনও ব্যবস্থাই নেই তাদের। সুতরাং তাদের প্ল্যান কী হবে সেটাও এবার আলাদাভাবে টেলিকম মন্ত্রক তথা ট্রাইকে জানাতে হবে। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে এই ব্যবস্থা বলবৎ করতে মোবাইল সংস্থাগুলিকে বাধ্য করা হলেও আশঙ্কা এবং অনিশ্চয়তা কিন্তু রয়েই যাচ্ছে। গ্রাহকদের তরফ থেকে প্রশ্ন উঠতেই পারে, কীভাবে প্রমাণ হবে সমস্ত মোবাইল সংস্থাই নিজেদের তথ্যভাণ্ডার থেকে যাবতীয় আধার নথি মুছে ফেলেছে? একবার সিস্টেমে কোনও নথি নথিভুক্ত হয়ে গেলে সেটি তো স্থায়ীভাবে বিভিন্ন ডেটাব্যাঙ্কে সংরক্ষিত হয়ে যায়! তাহলে একজন গ্রাহক কীভাবে নিশ্চিত হবেন যে তাঁর আধার নথি আর মোবাইল সংস্থার কাছে জমা নেই? আপাতত এই প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে প্রতিটি গ্রাহকের মনে।