একসময় পুজোসংখ্যাগুলির মতই পুজোর গান নিয়ে আগ্রহ ছিল বাঙালির। পুজোর অন্যতম আকর্ষণ বলতে তখন ছিল নামী শিল্পীদের ‘পূজার গান’ শিরোনামের অ্যালবাম। সংগীতপ্রেমীরা প্রতিবছরই অপেক্ষা করে থাকতেন এমনই নতুন নতুন গানের জন্য। কোন শিল্পী এবার কোন গান নিয়ে আসছেন, গানগুলো কেমন হয়েছে, কার গান হিট হচ্ছে, এসবই ছিল পুজোর আগে আলোচনার বিষয়। এবং সেইসব অ্যালবাম বিক্রিও হতো খুব। তবে এখন পুজোর গানের সেই রমরমা আর নেই। শুধু আধুনিক গান নয়, বাংলা ছবির গানও সেভাবে আকর্ষণ করতে পারছে না শ্রোতাদের। তবে তার মধ্যেও স্বমহিমায় বিরাজ করছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিগত কয়েক বছরে বাংলা গানের সিডি বিক্রির নিরিখে, শীর্ষস্থান দখল করে আছেন দাড়িওয়ালা বুড়ো লোকটাই।
এ বছরের পুজোর গানের বাজারের চিত্রও অন্যান্য বছরের মতই। এবারও ত্রাতা সেই রবীন্দ্রনাথই। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অভিনবত্ব আনছে কয়েকটি সংস্থা। এবারের চমক বাংলা গানের অ্যাপ। কলকাতায় প্রথম বাংলা গানের অ্যাপ আনছে কৃষ্টি ক্রিয়েশন। নাম ‘রেডিও কলকাতা’। এছাড়া থাকছে অ্যানিমেশন অ্যালবামও। আসলে সিডি কিনে বাংলা গান শোনার দিন প্রায় শেষ। তবে ভাবনা ক্যাসেট-এর বিশ্ব রায় জানালেন, এবার পুজোয় বাংলা গানের চাহিদা আছে ঠিকই। মানুষ এই পুজোর সময়টাতেই একটু আধটু সিডি কেনেন। তবুও আমরা সারা বছরই অ্যালবাম প্রকাশ করি। ভরসা সেই রবীন্দ্রনাথই। পুজোয় যেমন গীতাঞ্জলির ১৭৫টি কবিতাপাঠ বেরাবে। পাঠ করেছেন সকলের প্রিয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এছাড়া আগমনী ও শ্যামাসঙ্গীতও বের করছি। এটুকু বলতে পারি, একমাত্র রবীন্দ্রনাথই বাঙালির গান শোনার ইচ্ছেটাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। সঙ্গীতজগতের বনেদি ও নামী সংস্থা হিন্দুস্থান রেকর্ডস থেকে ২০টির মত অ্যালবাম বেরাচ্ছে। এই সংস্থা থেকেও রবীন্দ্রনাথের গান বেশি বেরাচ্ছে। সংস্থার তরফ থেকে গৌতম বসু জানালেন, আধুনিক গানের অ্যালবাম হাতে গোনা কয়েকটি বের করছি। আসলে বক্স আর্টিস্ট সেভাবে কেউই তো নেই এখন। নতুনরা চেষ্টা করলেও শ্রোতাদের মনে দাগ কাটতে পারছেন না। আমাদের ভরসা রবীন্দ্রনাথই।
তবে অধিকাংশ মিউজিক কোম্পানির কাছেই বাংলা আধুনিক গানের কদর নেই তেমন। কারণ ভাল গীতিকার ও সুরকারের অভাব। নেই তেমন বক্স আর্টিস্টও। ফলে বাংলা গানের পালে এখনও ‘খোলা হাওয়া’ সেই রবীন্দ্রনাথই।