নানা পাটেকর অভিনীত ‘আব তক ছপ্পন’ মনে আছে নিশ্চয়। অন্ধকার জগতের ত্রাস ‘এনকাউন্টার স্পেশালিষ্ট’ দয়া নায়েকের জীবনী নিয়ে তৈরি সিনেমা। প্রায় ৮০ জন অপরাধ জগতের ডন ছিল তার খতম তালিকায়। নিজের এবং পরিবারের জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্বেও মাথা নোয়াননি অপরাধীদের কাছে –এমনটাই দাবি করে থাকেন তাঁর ওপরওয়ালারা। কিন্তু দিনের শেষে তাঁর ডাকাবুকো শৌর্য ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ।
এমনটাই হয়। যে কোনও সিস্টেমই শৃঙ্খলার দাবি করে। কিন্তু দয়া নায়েকের মতো ‘ট্রিগার হ্যাপি’ পুলিশের সংখ্যাও কম নেই বাহিনীতে। অভিযোগ, হিন্দুত্বের ‘পোস্টার বয়’ যোগী আদিত্যনাথের প্রশ্রয়ে তারাই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। এমনিতেই উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ কম নেই! যোগী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ‘রোমিও স্কোয়াড’ ‘এনকাউন্টার’, ‘লাভ জিহাদ’-এর মতো একাধিক তত্ত্ব খাড়া করে গুলি চালানোর অভিযোগ লেগেছে পুলিশের উর্দিতে। মোটা টাকার বিনিময়ে কারও থেকে ‘সুপারি’ নিয়ে তার বিরোধীকে কোনও না কোনও মামলায় জড়িয়ে ‘এনকাউন্টার’ করে খতম করে দেওয়ার দুর্নামও আছে যোগীর পুলিশের বিরুদ্ধে। যে পুলিশের খাতায় যত বেশি ‘এনকাউন্টার’ তার তত বেশী খ্যাতি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আদিত্যনাথের প্রশ্রয়। সবমিলিয়ে ভয়ঙ্কর এবং বেপরোয়া হয়ে উঠেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। সেই দুর্নামেই এবার নতুন কালির পোঁচ ফেলেছে লখনৌয়ে অ্যাপেল-কর্তা বিবেক তিওয়ারিকে পুলিশের গুলি করে মারার ঘটনা। এটাকে বিরোধীরা মানবধিকার লঙ্ঘন বলেই মনে করছে। আইন শৃঙ্খলার লেশ মাত্র না থাকায় উত্তরপ্রদেশে অবাধ পুলিশরাজের অভিযোগও তুলছেন বিরোধীরা। ফলে চাপে পড়েছে বিজেপি-ও।
বিবেক-খুনে দেশ জুড়ে সমালোচনার মুখে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম-সহ সর্বত্র যোগীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সপা প্রধান অখিলেশ যাদব এবং কংগ্রেস নেতারা তাঁর পদত্যাগের দাবি করেছেন। মৃতের পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং সিবিআই তদন্তের আশ্বাস দিলেও ক্ষোভের আগুন নিভছে না। উল্টে হিন্দুত্বের ‘পোস্টার বয়’ যোগী আদিত্যনাথকে রাজনৈতিক পাঠ দিচ্ছেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা।
ঘটনার পরেই যোগী এবং তাঁর মন্ত্রীসভার কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। সূত্রের খবর, এই বৈঠকে যোগীর ‘ক্লাস’ নিয়েছেন শাহ। সাবধান করে বলেছেন, ‘রাজ্যে কথায় কথায় এনকাউন্টার করা এবার বন্ধ করুক পুলিশ’। রেডিওয় ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যোগীর নাম না উল্লেখ করে তাঁকে মানবধিকারের পাঠ পড়ান। বলেন, ‘সমাজে মানবধিকারের গুরুত্ব আমাদের বুঝতে হবে। আচরণে তার প্রয়োগ করতে হবে। যা সবকা সাথ, সবকা বিকাশ স্লোগানের মূল ভিত্তি’।
উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে যোগী সরকার যে ডাহা ফেল পুলিশের গুলিতে বিবেক-হত্যা তা আরও একবার প্রমাণ করে দিল।