আগেকার দিনে গুরু বা পন্ডিতমশাইরা যেভাবে শিক্ষা দিতেন, একল বিদ্যালয় চলে সেই ধাঁচেই। আসলে শৈশব থেকেই কচি কচি মাথায় হিন্দুত্বের বীজ পুঁতে দেওয়ার প্রতিষ্ঠান হল এই একল বিদ্যালয়। এখানে কেবলমাত্র ৬ থেকে ১৪ বছরের শিশু-কিশোরেরা পড়তে পারে। আর চার পাঁচটা স্কুলের মতই সপ্তাহে ৬ দিন স্কুল। তবে ক্লাসে পড়ুয়া কম। ক্লাসপিছু একজন শিক্ষক বা গুরু। আরোগ্য-সেবক ও সেবিকাও থাকেন। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ভাষা শেখানো হলেও একল বিদ্যালয়ের প্রধান উদ্দেশ্যই হিন্দুত্বের পাঠ দেওয়া। তাই স্কুলে বৈদিক শিক্ষাই মূল। ছোটদের বেদ, উপনিষদ ইত্যাদি মুখস্থ করানো হয়। নীতিশিক্ষার পাঠে পড়ুয়াদের হিন্দুধর্মের সমস্ত আচার মেনে চলার কথা বলা হয়। এছাড়া ভারতীয় সংস্কার ও পরম্পরা শেখানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। সারা দেশে সাড়ে ৭৫ হাজারের বেশি একল বিদ্যালয় আছে। সেখানে পড়াশোনা করে ২ লক্ষের বেশি ছাত্রছাত্রী। পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত ৩৫৪৩ একল স্কুল স্থাপন করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সবচেয়ে বেশি একল বিদ্যালয় রয়েছে রামপুরহাটে, ৩১০টি। দক্ষিণবঙ্গে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বারাসত, সোনারপুর, এই সব জায়গায় একল বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে।
প্রতিদিন স্কুল শুরু হয় সূর্য প্রণাম ও সরস্বতী বন্দনায়। পড়ুয়াদের স্নান করে এসে স্কুলে যোগ দিতে হয়। ছাত্র টানার জন্য এই একল বিদ্যালয়গুলিতে দেওয়া হয় মিড-ডে মিলের টোপ। সেক্ষেত্রে রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিকেই মূলত টার্গেট করা হয়। বিশেষত আদিবাসী এলাকায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এই একল বিদ্যালয় চালাচ্ছে। মাত্র দু’ থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ করে ঘুরতেও যাওয়া যায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এই একল বিদ্যালয়গুলিতে। এই সফরকে তারা বলেন ‘বনযাত্রা’। বনযাত্রায় যেতে গেলে আপনাকে একল বিদ্যালয়ের ফর্ম ভরতে হবে। আসলে এই একল বিদ্যালয়গুলিকে সামনে রেখেই চলছে হিন্দুত্ববাদী তৈরির কর্মযজ্ঞ। একইসঙ্গে চলছে পর্যটন ব্যবসা।