বনধ ব্যর্থ করে ভোর থেকেই পথে নামলেন মানুষ। বাস, ট্রাম সহ সবরকমের যানবাহন ছিল স্বাভাবিক। রাস্তার প্রতি মোড়ে মোড়ে টহল দিল পুলিশ। অফিসপাট, দোকান বাজার স্কুল-কলেজ ছিল খোলা। ছাত্র-ছাত্রী এবং অফিস কর্মীদের উপস্থিতিও উল্লেখ করার মতো। কলকাতা এবং শহরতলীর বেশ কয়েকটি জায়গায় বিজেপি গণ্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করলেও পুলিশ তা বানচাল করে দেয়। কয়েক জায়গায় দলীয় পতাকা নিয়ে রাস্তা অবরোধে করেছিল বিজেপি। কিন্তু সাধারণ মানুষ এবং তৃণমূল কর্মীরা যৌথ ভাবে অবরোধ তুলে দেন। সব মিলিয়ে বিজেপি-র ডাকা ১২ ঘণ্টার বনধ ব্যর্থ করে বাংলা থাকল আর পাঁচটা দিনের মতোই কর্মব্যস্ত।
ইসলামপুরের দুই ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে ১২ ঘণ্টার বনধ ডেকেছিল বিজেপি। তা শুনে মিলান থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, বাংলায় বনধের কোনও প্রশ্নই নেই। তৃণমূল কর্মীরা রাস্তায় নেমে জনজীবন সচল রাখবে। সেই ভাবেই বিজেপির ডাকা বনধ ব্যর্থ করতে পথে নামেন মানুষ। প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে ছিল তৃণমূল কর্মীদের জমায়েত। বিজেপির দিক থেকে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা হলেই সাধারন মানুষকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা।
তবে বেশ কয়েক জায়গা থেকে অশান্তির খবর পাওয়া গেছে। অভিযোগ, বনধ সফল করতে মরিয়া বিজেপি কর্মীরা কোচবিহারে একাধিক সরকারি বাস ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। রাস্তার মাঝখানে জ্বালিয়ে দেয় টায়ার। ধূপগুড়িতে বনধ তুলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের সঙ্ঘর্ষ বেঁধে যায়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের জিপ। রীতিমতো সঙ্ঘর্ষের চেহারা নেয় ধূপগুড়ি। বিজেপির ডাকা বনধের জেরে শিয়ালদহ মেন ও দক্ষিণ শাখায় ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছে। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার বহরু, গোচরণে, ডায়মন্ডহারবার সেকশনের ধানুয়ায় এবং ক্যানিং সেকশনের বেতবেড়িয়া-তালদি-ক্যানিং রেলের ওভারহেডে কলাপাতা ফেলে ট্রেন অবরোধের চেষ্টা করে বিজেপি কর্মীরা। অন্যদিকে, লক্ষ্মীকান্তপুর সেকশনের দক্ষিণ বারাসতে রেললাইনের ওপর স্লিপার ফেলে দেওয়া হয় সকাল ছটা নাগাদ।
তবে যে কোনও রকমের অশান্তি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত ছিল পুলিশও। জানা গেছে, এদিন শুধু কলতাতাতেই বনধ মোকাবিলায় নামানো হয়েছে ৪ হাজার পুলিশ কর্মী। আইন শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে ৬০ জনেরও বেশি উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকেরাও রাস্তায় ছিলেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রায় ৫০০ বনধ সমর্থককে মিছিল থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বসিরহাটেও রাস্তা অবরোধ তুলে দেয় পুলিশ। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বনধ সমর্থনকারীদের ওপর ক্ষোভ উগড়ে দেন সাধারন মানুষ। বিজেপি কর্মী এবং বনধ সমর্থকদের ‘স্টুপিড’ আখ্যা দিয়ে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার আহ্বান জানান তাঁরা।
সব মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে পথে নামা সাধারন মানুষ ব্যর্থ করে দিয়েছেন বিজেপির বাংলা বনধ।