মাঝেরহাটের ব্রিজ বিপর্যয় থেকেই শিক্ষা নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ তাই সেতু বা উড়ালপুল নিয়ে আর বিন্দুমাত্র ঝুঁকি নিতে রাজি নন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে এবার বিভিন্ন সেতুর হাল-হকিকত খতিয়ে দেখতে এবং নতুন সেতুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ব্রিজ কর্পোরেশন গঠন করতে চলেছেন তিনি। রাজ্যের সেতু-উড়ালপুল দুর্ঘটনার জেরে উদ্বিগ্ন মমতা ইতালির মিলানে শিল্প সম্মেলনের আগে নিজেই এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। বিদেশ সফর সেরে কলকাতায় ফিরেই মুখ্যমন্ত্রী এই কর্পোরেশন গঠন করবেন।
এদিন মিলান থেকে মমতা বলেন, ‘আমাদের রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় সবসময় পূর্ত দপ্তর ব্রিজ তৈরি করে তা নয়। জেলা পরিষদ বা পঞ্চায়েতও সেতু তৈরি করে। কিন্তু ওরা সেতু বানালেও সবসময় বিশেষজ্ঞ বা উন্নতমানের পরিকাঠামো থাকে না। আমি কলকাতায় গিয়েই ব্রিজ কর্পোরেশন তৈরি করে দেব। সেখানে বিশেষজ্ঞ কমিটি থাকবে। তারাই সবরকম পরামর্শ দেবে।’ কী কী সেই পরামর্শ? মমতা জানান, ব্রিজ কর্পোরেশনের ওই কমিটি ঠিক করবে কোথায় কোন সেতু তৈরি করতে হবে। পুরনো সেতুগুলির কোনটি কী অবস্থায় রয়েছে, তা দেখে রিপোর্ট দেবেন কমিটির বিশেষজ্ঞরা। মেরামত বা সংস্কার করতে হলেও তাঁরাই পরামর্শ দেবেন। তাঁরাই বলবেন, কীভাবে আরও ভালভাবে সেতুগুলির দেখভাল করা যায়। কোন সেতুতে হালকা না ভারী গাড়ি চলবে, তাও বলবেন বিশেষজ্ঞরা। কোন সংস্থাকে দিয়ে ওই কাজ করানো হবে, তা ঠিক করার দায়িত্বও দেওয়া হবে ওই কর্পোরেশনকে। মমতা আরও বলেন যে, ‘গত কয়েকদিন ধরে চিন্তাভাবনা করে দেখেছি, আলাদা করে সেচ, পূর্ত, পুর ও জেলাপরিষদের হাতে সেতু-উড়ালপুল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়ার চেয়ে এক ছাতার নীচে নিয়ে আসা জরুরি।’ ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম পর্যায়ক্রমে কলকাতা ও লাগোয়া এলাকার সেতুগুলি পরিদর্শন করছেন।
অন্যদিকে, মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নবান্নে বলেন, ‘রাজ্যের সমস্ত ব্রিজের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত ও কারিগরি উন্নতি সাধন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’ পার্থ জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী বিদেশ সফর থেকে ফিরে এলেই সমস্ত সেতুর বিষয়ে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কোনও সেতুতে প্রযুক্তিগত ত্রুটি আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে। নবান্ন সূত্রে খবর, সেচ, পূর্ত, কেএমডিএ বা সুন্দরবন উন্নয়নের মতো সেতু নির্মাণকারী সব দপ্তরই প্রস্তাবিত ব্রিজ কর্পোরেশনের অধীন থাকবে। অর্থাৎ, জেলা পরিষদ বা পঞ্চায়েত আর রাজ্যে কোনও সেতু তৈরি করবে না। যাবতীয় সেতুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং তার রূপায়ণের বিষয়ে চুড়ান্ত কথা বলবে প্রস্তাবিত কর্পোরেশনই। পূর্ত দপ্তরের কোনও প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফকে ওই কর্পোরেশনের নেতৃত্বে আনার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। আইআইটি, যাদবপুর বা শিবপুরের মতো প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদেরও কর্পোরেশনে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন শুধু মমতার দেশে ফেরার অপেক্ষা। তিনি ফিরলেই দ্রুত কর্পোরেশন গঠনের কাজ শুরু হবে রাজ্যে।