ইতালির হাত ধরে রেনেসাঁর সূত্রপাত। ১৮ শতকে তার ঢেউ এসে লাগল বাংলাতেও। মিলানের শিল্প সম্মেলনে এভাবেই বক্তব্য শুরু করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা ও ব্যবসাকে সমার্থক হিসাবে তুলে ধরে রাজ্যে বিনিয়োগের জন্য ইতালির শিল্পমহলকে আহ্বান জানালেন তিনি। মাইকেল অ্যাঞ্জেলো থেকে মোনালিসা, পাস্তা-পিৎজা-শিল্প-এসি মিলান – কিছুই বাদ গেল না মমতার ভাষণে। দুই দেশের সংস্কৃতির কথা তুলে ধরে এক লহমায় মিলিয়ে দিলেন মিলানের সঙ্গে কলকাতা আর ইতালির সঙ্গে ভারতকে।
ফ্যাশন দুনিয়ায় ইতালির নাম সুবিদিত। বস্ত্রশিল্পে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশকে সহযোগী হিসাবে পেতে এদিনের শিল্প সম্মেলনের মঞ্চকেই বেছে নেন মুখ্যমন্ত্রী। উপস্থিত শিল্পপতি, ইতালির বিভিন্ন চেম্বার অফ কমার্স এবং শিল্প সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, ‘রাজ্যে ডিজাইন শিল্প গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। এক্ষেত্রে ইতালি আমাদের বড় সহযোগী হতে পারে। ইতালি প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত। আমাদের বাংলায় দক্ষ কর্মী রয়েছে। রয়েছে ল্যাণ্ড ব্যঙ্ক, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ, পরিবহণের সুবিধা। তৈরি করা হয়েছে শিল্পের জন্য সহায়ক বিভিন্ন নীতি। চর্ম শিল্পের জন্য রাজ্যে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন লেদার হাব’। কলকাতায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাণিজ্য সম্মেলনে মিলানের শিল্পসংস্থার কর্তাদের আমন্ত্রণ জানান তিনি।
সেই সিঙ্গাপুর থেকে এ পর্যন্ত বিদেশের মাটিতে মুখ্যমন্ত্রী যত শিল্প বৈঠক করেছেন উপস্থিতির মানদণ্ডে মিলান ছিল সফলতম। ব্যবসায়ী মহলের আগ্রহ এবং উৎসাহ যে বেড়েছে, তাতেও কোনও সন্দেহ নেই। জার্মানির মতো ইতালির বিনিয়োগও ভারতে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। প্রায় ৬০০ কোম্পানি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে। বাংলাতেও আছে ইতালির এনডিউরা সংস্থা। মুখ্যমন্ত্রী চান বাংলায় পুঁজি নিয়ে ভিড় করুক ইতালির শিল্পপতিরা। বলা যায় আজকের বৈঠকের পর সেই সম্ভাবনা উজ্জ্বল হল।
মুখ্যমন্ত্রীর তাঁর নাতিদীর্ঘ ভাষণে সবচেয়ে জোর দিলেন চর্মশিল্পের ওপর। ইতিমধ্যেই বানতলায় নতুন করে চারটি অ্যাফ্লুয়েন্ট প্ল্যান্ট বসানো হচ্ছে। পরিকাঠামোর উন্নতিতে টাকা ঢালছে সরকার। কলকাতার চর্ম ব্যবসায়ীদের অন্যতম রমেশ জুনেজার আশা, ‘ এভাবে এগোলে বানতলায় ইতালির ব্যবসায়ীদের নিয়ে আসাটা কঠিন হবে না’। এনডিউরা সংস্থার সিইও কসিমো ফ্র্যাঙ্কো জানান, তাঁরা ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন। ইতালির আরও একটি সংস্থা অ্যাঞ্জোলো-ও বাংলায় বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে।