ঘটনা ১- ২০১৩ সালের পঞ্চায়েতে মুর্শিদাবাদে ছিল কংগ্রেস আর সিপিএমের দাপট। তৃণমূলের ঘাসফুল কোনও মতে উঁকি মারার চেষ্টা করছিল।
ঘটনা ২- জেলার চারদিকে তৃণমূলের জয় জয়কার। ঘাসফুলের পতাকা ছাড়া মুর্শিদাবাদের আকাশে কিছুই উড়ছে না। একদা দাপটে চলা কংগ্রেস, সিপিএম সব ফুৎকারে উড়ে গেছে। তবে মাঝখানে উঁকি মারছে বিজেপি।
ঠিক পাঁচ বছর পর ছবিটা এমন আমূল বদলে গেছে। আর মুর্শিদাবাদে ২৫০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে এবার তৃণমূল এককভাবে দখল করেছে ২৪৫ টি। বিজেপি-র সঙ্গে জোট করে কংগ্রেস পেয়েছে একটি। সেটি হল ফরাক্কার বেওয়া-২ নং গ্রাম পঞ্চায়েত। বিজেপি-র হাতে ৪ টি। আর সিপিএম শূন্য। অথচ, ২০১৩ সালে কংগ্রেসে ছিল ১২৫ টি, বামেরা পেয়েছিল ৮০ টি মতো। তৃণমূল ৮ – ১০ টি। বিজেপি শূন্য। একইভাবে ২৬ টি পঞ্চায়েত সমিতিতে কংগ্রেসের ছিল-১৪, সিপিএম-১১, তৃণমূল-১, এবার ২৬ টি-র মধ্যে তৃণমূল এককভাবে পেয়েছে ২৫ টি। ফরাক্কা পঞ্চায়েত সমিতি নির্ভর করছে বিজেপি-র ওপর। ২৭ আসনের মধ্যে কংগ্রেস-১৩, তৃণমূল-১২, বিজেপি-২। তৃণমূলকে ঠেকাতে কংগ্রেস, বিজেপি জোট বাঁধবে বলে ফরাক্কার খবর। জেলা পরিষদে ৭০ আসনের ৬৯ টি তৃণমূলের। একটি কংগ্রেস, তাও ফরাক্কাতেই। ২০১৩- তে তৃণমূল ছিল একটিতে। বাকি সব কংগ্রেস, সিপিএমের।
এবার কংগ্রেস যেটুকু পেয়েছে, সেটি হল ফরাক্কায়। মইনুল হক কংগ্রেস বিধায়ক। অধীরের এলাকায় কংগ্রেস একেবারে শূন্য। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এমন ফলাফল কীভাবে সম্ভব হল? খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, মূলত তিনটি কারণে এমন ফল। প্রথমত, ২০১৬ বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই তৃণমূলের সংগঠন শক্তিশালী হতে থাকে। অন্যদিকে কংগ্রেস, সিপিএম ভাঙতে থাকে। পঞ্চায়েত ভোট গ্রামের ভোট। নিচু তলায় সংগঠন না থাকলে জেতা অসম্ভব। কংগ্রেস, সিপিএমের সংগঠন না থাকাতে লাভবান হয়েছে তৃণমূল। দ্বিতীয়ত, মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস, বিশেষ করে অধীরের সঙ্গে সিপিএমের বোঝাপড়া দীর্ঘদিনের, এটি তৃণমূল নেতারা মানুষদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন। জেলার মানুষ সেকারণে তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছেন। তৃতীয়ত, অবশ্যই উন্নয়ন | মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী নিজে নজর দিয়েছেন ‘অবহেলিত মুর্শিদাবাদ’ – এর প্রতি। কাজ হয়েছে, এখনও হচ্ছে।
তৃণমূলের জেলার কার্যকরী সভাপতি সৌমিক হোসেন বলেন, ‘মুর্শিদাবাদে আজ তৃণমূল এক নম্বর দল। ধীরে ধীরে সংগঠন বেড়েছে, শক্তিশালী হয়েছে। শুভেন্দুদা সময় দিয়েছেন। আমরাও একজোট হয়ে কাজ করেছি। তার ফল এটি। মানুষও দেখেছেন, কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি সব এক। সে কারণে মানুষ আমাদের পাশে আছেন। আর মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে একটার পর একটা কাজ চলছে। তৃণমূল কাজ করে এটাই প্রমাণিত হল।’