একসময় পুজোসংখ্যার পত্রিকার মতোই পুজোর গান নিয়ে আগ্রহ ছিল বাঙালির। তখনও থিম সং-এর প্রচলন হয়নি বাংলায়। পুজোর অন্যতম আকর্ষণ বলতে তখন ছিল নামী শিল্পীদের ‘পূজার গান’ শিরোনামের অ্যালবাম। সেইসব গানের শ্রোতাও ছিল অনেক। সংগীতপ্রেমীরা প্রতিবছরই অপেক্ষা করে থাকতেন এমনই নতুন নতুন গানের জন্য। কোন শিল্পী এবার কোন গান নিয়ে আসছেন, গানগুলো কেমন হয়েছে, কার গান হিট হচ্ছে, এসব ছিল আলোচনার বিষয়। আর সেই সব অ্যালবাম খুব বিক্রি হতো। তবে এখন অবশ্য সেই পুজোর গানের কদর নেই। কেউ আর অপেক্ষা করে বসে থাকে না। তাই আগমনী গানকে নতুন করে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ।
এ বছর শারদোৎসবে আগমনী গানের সেই নস্টালজিয়াকে ফিরিয়ে আনছে নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ। আর সেই নস্টালজিয়া ফিরছে সুরসম্রাজ্ঞী আশা ভোঁসলে এবং অমিত কুমারের কণ্ঠে। ‘ময়না বলো তুমি কৃষ্ণ রাধে’, ‘মহুয়ায় জমেছে আজ মৌ গো’, ‘যাব কী যাব না’। সাতের দশকে, প্রতি পুজোয় রাহুল দেব বর্মনের সুরে এমনই অসংখ্য হিট গান উপহার দিয়েছিলেন আশা ভোঁসলে। প্রবাদপ্রতিম এই শিল্পীকে দিয়েই পুজোর গানের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনছে কলকাতার অন্যতম বড় পুজো নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ। আর তাদের এই উদ্যোগে সামিল হয়েছেন কিশোরকুমার পুত্র অমিতকুমারও। গানের রেকর্ডিং ও বিপণনে এগিয়ে এসেছে জনপ্রিয় অডিয়ো সংস্থা ‘আশা অডিও’।
মহালয়ায়, পুজোর উদ্বোধনের দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মিউজিক সিডির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করবেন। পুজোর সময় মণ্ডপে দু’টি এলইডি স্ক্রিনে দেখানো হবে গানের ভিডিও। কয়েক বছর ধরেই কলকাতার হেভিওয়েট পুজোগুলি, বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী ও পরিচালকদের দিয়ে থিম সং বানাচ্ছে। নাকতলা উদয়নও এর ব্যতিক্রম নয়। গত বারের মতো এ বারও তাদের থিম সং বেঁধেছেন ভূমি-খ্যাত সুরজিৎ। কিন্তু আশা-অমিতের গান দু’টি তার থেকে আলাদা। উৎপল দাসের কথায়, শিলাদিত্য-রাজের সুরে আশা গেয়েছেন, ‘এ বার পুজোয় এলাম ফিরে আবার কলকাতায়’ আর শ্রীরাজ মিত্রর কথায় আর শিলাদিত্য-রাজেরই সুরে অমিত গেয়েছেন ‘সুরে তুমি এই গানে তুমি।’ দুটি গানের রেকর্ডিং হয়েছে এই মাসেই। দুই শিল্পীর কেউই এর জন্য কোনও সম্মানদক্ষিণা নেননি।
নাকতলা উদয়ন সংঘের অন্যতম কর্মকর্তা কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘নতুন প্রজন্মের কাছে দুর্গার আগমনী গানকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নাকতলা উদয়ন সংঘের এবারের এই প্রয়াস।’ তিনি আরও বলেন যে, ‘এই ভাবনা মূলত এই পুজোর প্রাণপুরুষ, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁর মনে হয়েছিল, পুজোর গান বাঙালির প্রাণের জিনিস। সেই গান পুরোনো মেজাজে বাংলায় আবার ফিরে আসুক। সেই ভাবনা ভাগাভাগির ফলেই এই দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা।’ এই গান শুধু নাকতলা উদয়নের মণ্ডপেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। বাপ্পাদিত্যর কথায়, ‘কলকাতার পুজো কমিটিগুলির একটি যৌথ ফোরাম আছে। আমাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগও থাকে। তাই আমরা চাই, এই গান কলকাতার অন্যান্য পুজো মণ্ডপেও বাজুক। সেই ভাবনা থেকেই এই সিডি আমরা অন্যান্য পুজো কমিটিকেও পাঠাব। মেট্রোতেও এই গান প্রচারের চেষ্টা করা হবে। তা ছাড়া যে সব বিশিষ্টজন পুজো দেখতে আসবেন, তাঁদেরও এই সিডি উপহার দেওয়া হবে।’ এর পাশাপাশি, যাঁরা এই সিডি ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখতে চান, তাঁদের জন্য স্বল্পমূল্যে এটি বিক্রির ব্যবস্থা থাকবে মণ্ডপে। উদ্যোক্তাদের প্রতিশ্রুতি, তাঁদের এই প্রয়াস শুধু এই বছরের জন্য নয়। আগামী পুজোগুলিতেও বিশিষ্ট গায়কদের এই উদ্যোগে তাঁরা সামিল করবেন।