‘ভাদু-ভাদ কলাইয়ের ডাল, ভাদুর বিয়ে হবে কাল।’ ভাদুর বিয়ে আর হয় না। বিয়ের আগে আচমকাই মৃত্যু হয় ভাদুর হবু স্বামীর। সহমরণে যান ভাদু। সেই ভাদুর স্মৃতিকে বাঁধিয়ে রাখতেই উৎসব। শুরু হয় ভাদ্র মাসে। চলে আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। কাটোয়া মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে। তবে দিনকে দিন এই লােকগানের জনপ্রিয়তা কমছে। মহকুমার বাননাগরা, কুরচি, সিঙ্গি, মূলগ্রাম-সহ অন্তত গােটা পঞ্চাশ গ্রামে সাড়ম্বরে পালিত হত ভাদু উৎসব। এখন তা গােটা পনেরাে গ্রামে ঠেকেছে। তবে এই লােকগানকে মুছে যেতে দিতে চায় না রাজ্য সরকার।
কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দুঃস্থ ভাদুশিল্পী-সহ বিভিন্ন লােকশিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। মাসােহারার ব্যবস্থা করেছে। লােকগানের শিকড়ে এভাবেই জলমাটি দিচ্ছে সরকার।’ বাননাগরার বাসিন্দা পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী বলছিলেন, “ভাদ্র-আশ্বিন হল অবসরের মাস। চাষবাস সারা হয়ে যায়। অবসর বিনােদনের জন্য একসময় গ্রামে। গ্রামে বসত ভাদু গানের আসর। তারপর ভাদ্র মাসের শেষ থেকে ভাদুর মূর্তি নিয়ে কাছে-দূরের গ্রাম-শহর ঘুরে ঘুরে ভাদুর গান শুনিয়ে গঙ্গায় ভাদু ভাসিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে যেত। ভাদুকে কিশােরী কন্যা মানে গাওনার দল। মাটির মূর্তি সামনে রেখে গান। ধরে, ‘ভাদু আমার ছােট ছেলে/ কাপড় পরতে জানে না।’ ভাদুর উৎস মানভুম বলে মনে করা হয়।
অশীতিপর লােকগবেষক মুহম্মদ আয়ুব হােসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সেখানকার পঞ্চকোটরাজ নীলমণি সিংদেওর সেজো মেয়ে ভদ্রাবতী ওরফে ভাদুর বিয়ের আগে হবু বরের অকালমৃত্যু হয়। শােকে সহমরণে যান ভদ্রাবতী। আদরিণী ভদ্রাবতীকে স্মরণে রাখতেই রাজ্যজুড়ে সূচনা হয় ভাদু উৎসবের। আবার অনেকে বলেন, ভাদু হল হেতমপুরের রাজকন্যা। তার স্মরণেই উৎসব। অনেক জায়গায় ভাদুর হাতে দেওয়া ধানের শীষ। নানারকম ভােগ দেওয়া বা হয়। ভাদুকে সামনে রেখে ঢােল, খঞ্জনি, হারমােনিয়াম নিয়ে চলে ভাদুগান।