এতদিন যা হচ্ছিল পর্দার আড়ালে, এবার সেটাই প্রকাশ্যে চলে এল। দলীয় নেতাদের নির্দেশ ডোন্ট কেয়ার করে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনে রামের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল বামেরা। এবার দিলীপ ঘোষের স্বীকারোক্তি সেটাকেই দিনের আলোয় নিয়ে এল। বুক বাজিয়ে দিলীপ বলে দিলেন, ‘সিপিএমের যারা জিতেছেন, তাঁরা এখন আমার কাছেই আছেন! ঠিক সময় তাঁদের বের করব’। দিলীপের এমন কলার তোলা উক্তিই বাম-রাম জোটে একপ্রকার সিলমোহর দিল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
গোটা ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে সিপিএম। কারণ কয়েক দিন আগেই আমডাঙার মাধবপুরের পথসভা থেকে বিজেপি-কে সাম্প্রদায়িক দল বলে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। এমনকি আমডাঙার মাটিতে বিজেপি-কে কোনও জায়গা না দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। সেটা যে নেহাতই লোক দেখানো ফাঁকা বুলি ছিল, দিলীপের মন্তব্য সেটাই প্রমাণ করে দিল। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, সিপিএম-বিজেপি-র গোপন বোঝাপড়া আছে। এবার দিলীপবাবুর স্বীকারোক্তিতে সেটাই জলের মতো প্রমাণ হয়ে গেল’। তবে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী বিমান বসুদের মুখ রক্ষার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে গেলেন। বললেন, ‘দিলীপবাবু ফাঁকা আওয়াজ দিচ্ছেন। ওঁর দাবি ভিত্তিহীন’।
জানা গেছে, আমডাঙার গণ্ডগোলের আগে মরিচা পঞ্চায়েতে ২ বিজেপি সদস্য সিপিএমকে সমর্থন করে বোর্ড গঠন করতে যায়। তার ক্যেকদিনের মাথায় বিজেপি-র এক সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ওই বিজেপি সদস্যকে সিপিএম-এর জেলা পার্টি অফিস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদিকে আমডাঙা কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত জাকির ভল্লুক ঘটনার পর থেকেই ফেরার ছিল। তাঁকে রাজস্থানের আজমেঢ় থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযোগ, রাজস্থান পালানোর আগে বিজেপি-র রাজ্য অফিসে গা ঢাকা দিয়েছিল ভল্লুক।
এ ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় দিলীপের জবাব, ‘আমাদের পার্টি অফিসে থাকলে পুলিশ ধরল না কেন? আমাদের তো একে-৪৭ নেই’। তারপরেই দিলীপ বলেন, ‘সিপিএমের যারা জিতেছেন তাঁরা আমাদের হেফাজতে আছেন। কারণ সিপিএমের দম নেই’। তখন দিলীপকে আবার প্রশ্ন করা হয়, তাহলে জাকির ভল্লুকও কি ছিল? তিনি বলেন, ‘জাকির যেখানে ছিল, সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিপিএমের বাকিরা সব আমার কাছেই আছেন। ঠিক সময়ে তাদের বের করব। প্রধান আমরাই করব।‘ তাহলে কি বিজেপি-র প্রধান হবে? উত্তরে দিলীপ বলেন, ‘সিপিএমেরই প্রধান হবে। ওরা আমাদের দলে আসতে চাইছিল। আমরা বলেছি জিতে আসতে’। তাহলে কি রাম-বাম জোট হচ্ছে? দিলীপের কথায়, ‘সময়ই তা বলবে’।