বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে রাস্তাঘাটে গাড়ির সংখ্যা যে কমবে, তা জানাই ছিল। প্রতিবছরই এ দিনে হাতেগোনা যানবাহন চলে শহরে। এ বছরেও তার অন্যথা হয়নি। তবে সোমবার দুপুর গড়াতেই বহু রুট থেকে বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সি এবং অটো যে কার্যত উধাও হয়ে যাবে তা অনেকেই অনুমান করতে পারেননি। ফলে রাস্তায় বেরিয়ে হয়রানির শিকার হন অনেকেই।
গতকাল বাসের সংখ্যাও ছিল অন্য দিনের তুলনায় অনেকটাই কম। চরম আকাল দেখা গিয়েছে হলুদ ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-ক্যাবের ক্ষেত্রেও। পাটুলি, বালিগঞ্জ, রুবি, বেহালা চৌরাস্তা, টালিগঞ্জ, ডালহৌসি, কিংবা কলেজ স্ট্রিট ছাড়াও অ্যাপ-ক্যাব পেতে গিয়ে যাত্রীদের নাকাল হতে হয়েছে বিমানবন্দর, নিউ টাউন এবং পাঁচ নম্বর সেক্টরের মতো এলাকাতেও। একইসঙ্গে ভাড়ার হারও ছিল অস্বাভাবিক রকমের বেশি। বহু ক্ষেত্রেই যাত্রীদের অন্য দিনের তুলনায় দ্বিগুণ থেকে আড়াই গুণ ভাড়া গুনতে হয়েছে অ্যাপ-ক্যাবে। ফলে সার্জ প্রাইস কমানো নিয়ে সরকারি বিধি-নিষেধ অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলি কতটা মেনে চলছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীদের অনেকেই।
কাল দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ পাটুলি থেকে ডালহৌসি পৌঁছতে একটি অ্যাপ-ক্যাব ডাকেন মৈত্রেয়ী সরকার। ওই দূরত্ব যেতে অন্য দিন তাঁকে গড়ে ২৪০-২৫০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। এ দিন দিতে হয় ৫৫০ টাকা। বাগুইআটি থেকে পার্ক সার্কাস যেতে অ্যাপ-ক্যাব ভাড়া করেন রত্নাঙ্ক মজুমদার। ১৫০-১৬০ টাকার ওই দূরত্ব যেতে তাঁকে দিতে হয় ৩৫০ টাকা। একই ভাবে বেহালা চৌরাস্তা থেকে বিমানবন্দর যেতে এক যাত্রীকে গুনতে হয়েছে ৮৭০ টাকা। সন্ধ্যার পরে পরিস্থিতি আরও করুণ হয়। বেহালা, সল্টলেক, বিমানবন্দর, নিউ টাউন, ইকো পার্কের মতো বহু জায়গা থেকে অ্যাপ-ক্যাবের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘অ্যাপ-ক্যাবের বেশির ভাগই ব্যাক্তি মালিকাধীন গাড়ি। অনেকেই এ দিন বিশ্বকর্মা পুজো নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন। ফলে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম ছিল।’ তার মধ্যেই যাঁরা গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছেন, তাঁরা চড়া হারে ভাড়া আদায় করেছেন। অ্যাপ-ক্যাবের চড়া ভাড়া নিয়ে পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক বলছেন, ‘সংস্থাগুলি কী ভাবে ভাড়া আদায় করছে সেই সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে তথ্য দিতে গড়িমসি করা হচ্ছে। গোলমাল পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাস্তায় বেসরকারি বাস-মিনিবাসের সংখ্যা কম থাকা নিয়ে জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিশ্বকর্মা পুজোয় বাসের সংখ্যা কমে। যাত্রীও কম থাকে। কিন্তু এ বার ডিজেলের দাম এত বেড়েছে যে খালি বাস চালানোর ঝুঁকি অনেক চালক-কন্ডাক্টরই নিতে চাননি। ফলে শহরের প্রধান রাস্তাকেন্দ্রিক রুট ছাড়া বেশির ভাগ জায়গাতেই বেসরকারি বাস হয় বেরোয়নি নয় দু’-এক ট্রিপের পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’