মাঠে ময়দানে মিটিং থেকে টিভি বিতর্ক। দারুন বক্তা হিসেবেই নিজেঁকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন প্রাক্তন বাম ছাত্র নেতা ঋতব্রত। ছাত্র রাজনীতির একদম নিচের তলা থেকে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিলেন। সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর সৰ্ব্বাচ্চ পদে ছিলেন টানা আট বছর। এসএফআই-এর সাধারণ সম্পাদক থাকা কালীনই রাজ্যসভার সদস্য। তুখোড় পারফরম্যান্সের সুবাদে শুরু থেকেই নজর কাড়তে শুরু করেন। অনেকেই বলেন সংসদের ভিতরে আর সংসদের বাইরে ঋতব্রতর পারফরমেন্স ও জনপ্রিয়তাই ঋতব্রতর বিপদ ডেকে আনে। সংসদের ভিতরে সিপিএমের বাঘা বাঘা বর্তমান ও প্রাক্তন সাংসদদের পেছনে ফেলে না দিলে কি ঋতব্রত বিপদে পড়তেন ? রাজনৈতিক সূত্রের খবর এক বর্ষীয়ান সাংসদকে টেক্কা দিয়ে বক্তা হিসাবে ঋতব্রত কে চেয়ে পাঠানোর আবেদন আলিমুদ্দিনের যত আসতে শুরু করে ঋতব্রতর বিপদও ততই বাড়তে থাকে। শোনা যায় এমপিদের আয় সম্পর্কিত একটি চিঠি ঋতব্রত আলিমুদ্দিনে জমা দেওয়ার পর প্রাক্তন ও বর্তমান এমপিদের অনেকেই অসম্ভব ক্ষিপ্ত হন। টার্গেট হয়ে যান ঋতব্রত।
মুখ খুলে সিপিএম থেকে বহিস্কৃত হওয়ার পরেই ঋতব্রতর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হয় ।আদালতে বিচারধীন হলেও বিষয়টি নিয়ে মিডিয়া ট্রায়াল চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঋতব্রত রাজনৈতিক কোনো প্রশ্ন তুললেও তার উত্তর না দিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণেই স্বাচ্ছন্দ্য থাকছেন তার প্রাক্তন দলের একটি অংশ ।
ধারাবাহিক এই আক্রমণে নতুন সংযোজন সাম্প্রতিক প্রকাশিত একটি খবর । ঋতব্রতর বিরুদ্ধে অভিযোগকারিণী এবার বিদেশে অভিযোগ করেছেন। সেই নিয়েই মেতে রয়েছে আলিমুদ্দিন বাহিনী ও কিছু স্তাবক মাধ্যম ।
ভারতীর সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদে পরিষ্কার যা লেখা আছে বাংলায় তার সারমর্ম করলে দাঁড়ায় নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি মানে ভারতীয় নাগরিককে একই অভিযোগে দুবার সাজা দেওয়া যাবে না। তার মানে হলো যে একই অপরাধের জন্যে একাধিক ট্রায়াল একই সাথে চলবে না। কিন্তু সে তো ভারতবর্ষের মধ্যে। বাইরে হলে কি হবে? মানে ধরুন আপনার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ যদি ভারতে ও বিদেশে দায়ের করা যায় তাহলে কি হবে? জটিল প্রশ্ন। ঠিক এমনটাই হয়েছে রাজ্য সভার সাংসদ ঋতব্রত ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে।
বালুরঘাট থানাতে উক্ত অভিযোগকারী দু দুটি মামলা আনেন ঋতব্রতের বিরুদ্ধে। একটি মামলা ধর্ষণ (৩৭৬ ), শ্লীলতাহানি (৩৫৪) ও সম্মানহানি (৫০০) এর। যাইহোক দুটি মামলাতেই আদালত যথেষ্ট সন্তুষ্ট হবার পরেই ঋতব্রত বাবুকে জামিন দেন। বিশেষ সূত্রের খবর অনুযায়ী অভিযোগকারীনীর পূর্ব তথা প্রাক্তন স্বামী সঙ্গেও তার সম্পর্ক বেশি দিনের ছিল না। বালুরঘাটের রঘুনাথপুর নিবাসী ঐ ব্যক্তিও বিশেষ ক্ষতিপূরণ হিসেবে মোটা অঙ্কের অর্থ উক্ত অভিযোগকারীনীকে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। শুধু বালুরঘাট থানাই নয় উক্ত অভিযোগকারীনী সংসদের উচ্চ কক্ষের এথিকস কমিটি সহ উপ রাষ্ট্রপতি ও রাজ্য সভার চেয়ারম্যানকে ও এ বিষয়ে চিঠি লেখেন। পরবর্তী কালে তিনি বালুরঘাট থানাতে আরো একটি মামলা করেন তথ্য প্রযুক্তি আইনে।
যাইহোক এখনও পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন স্থানে ও দপ্তরে অভিযোগ করেও অভিযোগকারীনী ঋতব্রত বাবুকে হাজতে পুরতে পারেন নি বা এথিকস কমিটি অদ্যাবধি তাঁর সাংসদ পদ খারিজ করেন নি। তাই হয়তো ভারতীয় আইন ব্যবস্থার প্রতি যথেষ্ট আস্থা না রাখতে পেরে তিনি “নেদারল্যান্ডে” এই একই অভিযোগে মামলা এনেছেন। অর্থাৎ অভিযোগকারীনী চান একই অভিযোগে পৃথিবীর দুই প্রান্তে ঋতব্রত বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগের ট্রায়াল হোক! অর্থাৎ পরিণামে তিনি চান যে পৃথিবীর দুটি দেশই ঋতব্রত বাবুকে সাজা দিক। অভিযোগের বহর অন্তত সে দিকেই ইশারা করছে।
এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে অভিযোগকারিণী অভিযোগ করেন ঋতব্রত বাবু থানাতে অভিযোগ করার পর । ঋতব্রত বাবু ৬/১০/২০১৭ তারিখে গরফা থানাতে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। তিনি ঐ অভিযোগ পত্রে বলেন যে উক্ত অভিযোগকারীনী তাকে মিথ্যে ফৌজদারী মামলাতে ফাঁসিয়ে দেবার ভয় দেখিয়ে ৫০ লক্ষ টাকা দাবী করছেন। ঐ টাকা দেবার জন্যে ঋতব্রতবাবুকে ১৫/১০/২০১৭ অবধি সময় দিয়েছিলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঋতব্রতবাবু আড়াই লক্ষ টাকা গত ৪/১০/২০১৭ তে দিয়েছিলেন। একটি কথা ঋতব্রতবাবুর অভিযোগে ঋতব্রত বাবু নিজেও উল্লেখ করেন নি সেটি হলো যে মোবাইল নম্বর থেকে ঋতব্রতবাবুর কাছে ৫০ লক্ষ টাকার দাবী এসেছিল সেই একই মোবাইল নম্বর থেকে হোয়াটস এ্যাপে এও বলা হয় যে “ যখন ইচ্ছা ফোন করবো(মোবাইলের ব্যক্তি) ধরবি”। ঐ একই নম্বর থেকে এও বলা হয় যে “আমি ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবি না”। (এই প্রতিবেদকের কাছে মোবাইল কথোপোকথনের স্ক্রীন শট সংরক্ষিত)।
ঋতব্রত বাবু আদালতে প্রথম বার জামিন পাবার সাথে সাথেই সংসদের এথিক্স কমিটিতে অভিযোগ করেছিলেন তরুণী। প্রশ্ন হচ্ছে এথিক্স কমিটিতে অভিযোগ করবার রাস্তা তিনিই খুঁজে নিয়েছিলেন না তাকে কেউ বা কারা সেই রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছিলো।
ঋতব্রত বাবু বাংলার স্বার্থে সংসদে সরব । বাংলাই যে তার অগ্রাধিকার তা তিনি প্রকাশ্যেই বলেন বার বার । আর সাথে সাথেই তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয় । তার তোলা একটিও রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর আজ অবধি কেউ দেননি । উল্টো লাগামহীন কুৎসাও ব্যক্তি আক্রমণের শিকার হয়েই চলেছেন তিনি । এখানেই প্রশ্ন উঠছে । অনেক প্রশ্ন । বিচারটা উদ্দেশ্য নাকি ঋতব্রত বাবুকে ব্যক্তিগত আক্রমণ ? আজ না হলেও কাল এর উত্তর পাওয়া যাবেই ।
একটি সূত্রের খবর অনুযায়ী অভিযোগকারীনী বর্তমানে ইংলন্ডে বসবাসকারী এবং তিনি ভারতীয় পাসপোর্ট এখনও ব্যবহার করছেন। তাহলে যে অভিযোগে এদেশে যথেষ্ট সাজার সংস্থান রয়েছে তাহলে এদেশের পর সুদুর নেদারল্যান্ডে একই অভিযোগ দাখিল করার কারণ কি? ভারতীয় আইনের প্রতি অনাস্থা নাকি ঋতব্রত বাবুকে এদেশের সঙ্গে ও দেশেও সাজা দেওয়ানোর দূরহ ভাবনা। উত্তরটি অভিযোগকারীনীই জানেন।
আর হয়তো আরও ভালো করে জানেন ঋতব্রতর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী কেউ বা কারা।
(মতামত লেখিকার ব্যক্তিগত)
প্রিয়া দত্ত
(লেখিকা সমাজকর্মী ও সাংবাদিক)