এক দশক বাদে ক্যাম্পাসের ছাত্র নেতা পেল তৃণমূল।বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যকে টিএমসিপি রাজ্য সভাপতি পদে নিয়োগ করায় ১০ বছর পর ফের ক্যাম্পাস প্রতিনিধির হাতে ফিরল তৃণমূলের ছাত্র নেতৃত্ব।
হালিশহরের তৃণাঙ্কুর নৈহাটির ঋষি বঙ্কিম কলেজ থেকে মাইক্রোবায়োলজিতে অনার্স নিয়ে পাশ করেছেন। সেখানেই তাঁর ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি। বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি পাশ করে তৃণাঙ্কুর বর্তমানে এমবিএ পড়ছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়ুয়া অবস্থায় ছাত্র সংগঠনের সভাপতির পদ পাওয়ার ঘটনা তৃণমূলে বিরল। সংগঠনের গুরুদায়িত্ব পেলেও একইসঙ্গে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চান বলে জানিয়েছেন তৃণাঙ্কুর।
কংগ্রেস ভেঙে ১৯৯৮ সালে তৃণমূলের আনুষ্ঠানিক সূচনার পরপরই ছাত্র পরিষদও দু’ ভাগে বিভক্ত হয়। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রথম রাজ্য সভানেত্রী হয়েছিলেন সোনালি গুহ। ২০০১ সালে বিধায়ক হওয়ার পর ওই পদে নিযুক্ত হন বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। এঁরা দু’জনেই প্রাথমিকভাবে ছাত্র পরিষদের সক্রিয় সংগঠক হিসেবেই রাজনীতিতে এসেছিলেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত বৈশ্বানরই একনাগাড়ে দীর্ঘসময় ধরে ছাত্র সভাপতির পদে ছিলেন। পড়াশুনা শেষে করে পেশাগতভাবে আইনজীবী হলেও ছাত্র নেতৃত্বে তাঁর বিকল্প ছিল না। শঙ্কুদেব পণ্ডা পড়াশুনা শেষ করে সাংবাদিকতার চাকরি করতে করতে বৈশ্বানরের বিকল্প হিসেবে টিএমসিপির সভাপতি হন। তাঁর সঙ্গেও ক্যাম্পাসের কোনও যোগাযোগ ছিল না। সারদাকাণ্ডের জেরে তাঁর ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক উঠতেই তাঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বাম আমলে পিটিটিআই আন্দোলনের সূত্রে তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল আসানসোলের অশোক রুদ্রের। একদা পিটিটিআই আন্দোলনের পরিচিত মুখ অশোক যখন শঙ্কুদেবের জায়গায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি হন, তখন তিনি পুরোদস্তুর প্রথমিক স্কুল শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি ছাত্র সংগঠনের শীর্ষপদে বসার ঘটনাও বিরল। কিন্তু রাজ্যে টিএমসিসিপির প্রধান প্রতিপক্ষ এসএফআই বাম শাসনের অবসানের পর থেকেই ছাত্রমহলেও গুরুত্ব হারাতে শুরু করে। তৃণমূলের সর্বগ্রাসী দাপটের জেরে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে টিএমসিপির নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। ২০১৫ সালের ২৮ আগস্ট টিএমসিপির প্রতিষ্ঠা দিবসে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ভাষণ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে পড়েন জয়া দত্ত। ততদিনে কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যের প্রায় সমস্ত কলেজ টিএমসিপির দখলে। ২০১৬ সালের মে মাসে বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরের দিন সদ্যবিজয়ী বিধায়কদের নিয়ে কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠকে বসেছিলেন মমতা। সেখানেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভানেত্রী হিসেবে জয়ার নাম ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী স্বয়ং।
উল্লেখ্য, জয়ার সঙ্গেও ক্যাম্পাস রাজনীতির কোনও সম্পর্ক ছিল না। তিনি দূর শিক্ষায় স্নাতকোত্তর কোর্স করেছিলেন। কোনও দিনও কলেজ ক্যাম্পাসে তাঁকে রাজনীতি করতে হয়নি। কিন্তু মাস দুয়েক হল তাঁর বিকল্প খুঁজছিলেন দলের শীর্ষকর্তারা। অবশেষে এমন একজনকে টিএমসিপির মুখ হিসেবে বেছে নেওয়া হল, যাঁর সঙ্গে ক্যাম্পাসের প্রত্যক্ষ যোগসূত্র বর্তমান।