মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিকাগো সফর বাতিল হওয়ার জন্য সব দিক থেকেই অভিযোগের তীর বিজেপি ও আরএসএসের দিকে। কেন্দ্রীয় সরকারের মানসিকতার সমালোচনা হচ্ছে রাজ্য জুড়েই। তাই এবার তড়িঘড়ি সাফাই দিতে আসরে নামল বিদেশ মন্ত্রক। তাদের দাবি, সেই সফরের জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর তরফে কোনও আবেদনই আসেনি। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রভীশ কুমার বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিকাগো সফরের ক্লিয়ারেন্স চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কোনও আবেদনই আসেনি। তাই তাঁকে অনুমতি না দেওয়ার যে অভিযোগ উঠছে তা সত্যি নয়’। যদিও এই দাবি মানছে না তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের মতে, মমতার শিকাগো সফর বাতিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তৃণমূলের মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনও বিজেপি-র দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।
প্রসঙ্গত, আমেরিকার শিকাগো শহরে বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দের বক্তৃতার ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে মমতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল রামকৃষ্ণ মিশন। যাওয়ার প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ১১ জুন হঠাৎ তাঁকে চিঠি দিয়ে ২৬ অগস্টের ওই অনুষ্ঠান বাতিল করার কথা জানানো হয়। সম্প্রতি স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার ১২৫ বছর পূর্তিতে বেলুড় মঠে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি বলেন, ‘বিবেকানন্দ শিকাগোতে গিয়ে বিশ্ববাসীর মন জয় করেছিলেন। শিকাগোর যে হলে স্বামীজি বক্তৃতা দিয়েছিলেন আমরা এবছর সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। আমন্ত্রণটা ছিল মূলত রামকৃষ্ণ মিশনের। কিন্তু, কিছু ষড়যন্ত্রকারীর জন্য তা সম্ভব হয়নি। তারাই একাজ করেছে যারা চায়নি রামকৃষ্ণ মিশন ওখানে অনুষ্ঠানটা করে। অনেকেই হয়তো চায়নি বাংলার মানুষ ওখানে পৌঁছে যাক। এই ঘটনায় আমি সত্যিই খুব দুঃখ পেয়েছি’।
অনুষ্ঠান বাতিলের কারণ জানাতে গিয়ে, সোসাইটির অধ্যক্ষ স্বামী ঈশাত্মানন্দ চিঠিতে মমতাকে লিখেছেন, রামকৃষ্ণ মিশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বামী অভিরামানন্দের আকস্মিক মৃত্যু এবং অন্য কিছু ‘অপ্রত্যাশিত অসুবিধার’ জন্য অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হচ্ছে। যদিও প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া নেওয়া থেকে শুরু করে অন্য নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গিয়েছিল বলে রামকৃষ্ণ মিশনের দাবি। এখানেই বিষয়টি এতটা ‘সরল নয় বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সূত্রের খবর, অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ার কারন হিসাবে রামকৃষ্ণ মিশন যে দাবি করেছে তা খুব একটা গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁদের মতে, মমতার সফর বাতিল করার কারণ পুরোপুরি রাজনৈতিক।
তৃণমূলের মুখপাত্র ডেরেক ও ব্রায়েনের ইঙ্গিতও সেদিকেই। তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর সফর বাতিল কার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল বিজেপি এবং আরএসএস। কারণ, ওই একই সময় বিজেপি-আরএসএস শিকাগোতে মোহন ভাগবতেরে উপস্থিতিতে গ্লোবাল হিন্দু কংগ্রেস নামের একটি সম্মেলন করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকলে প্রচারের সব আলো তাঁর দিকেই ঘুরে যেত। তাই আরএসএস এবং বিজেপি নিজেদের অনুষ্ঠানের গুরুত্ব বাড়াতেই কায়দা করে বেদান্ত সোসাইটির ওপর চাপ দিয়ে মমতার সফর বাতিল করায়’।