রেকর্ড পরিমাণে দরপতন হয়েই চলেছে ভারতীয় মুদ্রার। চলতি বছরে এ ঘটনা প্রথম নয়। তবে গত মাসের শেষ থেকে এ প্রায় নিত্যঘটনা হয়ে গিয়েছে দেশবাসীর কাছে। বিশেষ সূত্রে খবর, টাকার দামের রেকর্ড পতনে বেসামাল কেন্দ্র এবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিল। গত সপ্তাহেই এই ব্যাপারে নির্দেশ পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কাছে । যদিও এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক।
গত এক মাস ধরে ডলারের তুলনায় টাকার দামে লাগাতার পতনে উদ্বিগ্ন সারা দেশ। এর প্রভাব পড়েছে শেয়ার বাজারেও। সমস্যার মুখে দেশের আমদানি-রপ্তানি। যার ফলে কমছে দেশের বিদেশি মুদ্রার ভাঁড়ারও। চলতি বছরে ডলার পিছু টাকার মূল্য পড়ে গেছে প্রায় ১১.৬ শতাংশ, যা সর্বকালীন রেকর্ড। সোমবার বাজার বন্ধের সময় ডলার পিছু টাকার মূল্য দাঁড়িয়েছিল ৭২.৬৬ টাকা। স্বাধীনতার পর কখনও এত সস্তা হয়নি টাকা। টাকার দামে পতন আটকাতে জুন মাসে ৬১৮ কোটি মার্কিন ডলার বিক্রি করেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। মে মাসেও ৫৮০ কোটি টাকা অর্থমূল্যের মার্কিন ডলার বাজারে ছেড়েছিল তারা। তাই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডলারের ভাঁড়ারও যে খুব ভাল জায়গায় নেই, তা বলাই বাহুল্য। এপ্রিল মাসে বিদেশি মুদ্রার ভাঁড়ারে ছিল ৪২,৬০০ কোটি ডলার। আগস্টের শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার কোটি ডলারে।
ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে বিরোধীরা। বিরোধী দলগুলির একের পর এক তোপের মুখে পড়ে একপ্রকার অসহায়ই দেখিয়েছে মোদি সরকারকে। সব মিলিয়ে সামগ্রিক চাপের মুখে পড়ে অবশেষে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হল কেন্দ্র। কী ব্যবস্থা নিলে টাকার দামে নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কাছে তা জানতে চেয়েছে বিপাকে পড়া কেন্দ্রীয় সরকার।
টাকার দামে পতন আটকাতে কেন্দ্রের প্রথম নজর অনাবাসী ভারতীয়দের হাতে থাকা বিদেশি মুদ্রার দিকেই। সেই বিদেশি মুদ্রা বা ডলার টানতে অনাবাসী ভারতীয়দের জন্য আকর্ষণীয় সঞ্চয় প্রকল্প তৈরি করার কথা ভাবা হচ্ছে। অনাবাসী ভারতীয়রা এই প্রকল্পে বিদেশি মুদ্রা জমা রাখলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার আরও বাড়বে। তার ফলে ডলারের বিনিময়ে টাকার মূল্যে নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হতে পারে বলে মনে করছে কেন্দ্র। কিন্তু এভাবে টাকার পতন কতটা সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞদের একাংশ এবং খোদ সরকারই। ফলে অনাবাসী ভারতীয়দের জন্য সঞ্চয় প্রকল্প ছাড়া আরও কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। যদিও তা নির্দিষ্টভাবে জানানো হয়নি।
অশোধিত তেল ও পেট্রোপণ্যের দামবৃদ্ধি, একই সঙ্গে টাকার দাম পড়ে যাওয়া। দুটি কারণে বেসামাল কেন্দ্র যেভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হল, এরকমটা আগে ঘটেনি বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এত কিছু ঘটার পড়েও গত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়েছিলেন, টাকার দাম পড়ায় উদ্বেগের কিছু নেই। তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার মত তেমন কিছু হয়নি- এমন আজগুবি কথা বলতেও শোনা যায় তাঁকে। কিন্তু তারপরই যেভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হল কেন্দ্র, তাতে অবশ্য উদ্বেগের ছবিটাই ধরা পড়ল। আসলে অশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং টাকার মূল্যহ্রাস, এই জোড়া ফ্যাসাদে পড়ে বেসামাল কেন্দ্র এখন যেন তেন প্রকারেণ অবস্থা সামাল দিতে চাইছে, যাতে নতুন করে আর দেশবাসীর কাছে মুখ না পোড়ে। আর অন্যদিকে, নিরুপায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আরও একবার ডলার বিক্রির তোড়জোড় শুরু করেছে বলেই শোনা যাচ্ছে।