যেন কোনও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থল। যেখানে খনন করতেই মাটির নীচ থেকে উদ্ধার হয় একের পর এক আশ্চর্য। আমডাঙার মাটির নীচেও লুকানো রয়েছে গুপ্তধনের ভান্ডার। তবে তা কোনও পুরাতাত্ত্বিক বস্তু নয়। সে গুপ্তধন আসলে থরে থরে সাজানো বোমা। বোমার স্তুপ যেন গোটা আমডাঙাই। এখনও এখানের বহিশগাছি গ্রামে বোমা উদ্ধার অব্যাহত। শনিবার একদল গ্রামবাসী ওই এলাকার বোমা উদ্ধারে মাঠে নেমেছিলেন। রবিবারও ফের বোমা মিলল ওই গ্রামে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিপিএমের এক লোকাল কমিটির সদস্যের বাড়ির পিছনে একটি বাঁশবাগান থেকে বেশ কয়েক ড্রাম বোমা পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের দাবি, তাতে ৫০টির মত বোমা পাওয়া গিয়েছে। ঘটনার পর ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও ভুরি ভুরি বোমা উদ্ধার হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন এলাকার মানুষ।
গত ২৮ আগস্ট আমডাঙার তারাবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের এই বহিশগাছি গ্রামে রাজনৈতিক গণ্ডগোলে উত্তাল হয়ে উঠেছিল। অভিযোগ, সিপিএম এখনও বিপুল পরিমাণ বোমা মজুত করে রেখেছে। তাই ঘটনার পর প্রায় দু’সপ্তাহ হতে চললেও এখনও এখনও বোমা উদ্ধার হচ্ছে। শনিবার গ্রামবাসীরা বহিশগাছি গ্রামে বোমা উদ্ধারে নেমে ঘোষপাড়ায় মাটির নীচে এক বিশাল বোমার ভান্ডারের সন্ধান পায়। তারা এক সিপিএম নেতার বাড়ি সংলগ্ন এলাকা থেকেই অসংখ্য বোমা উদ্ধার করেন। বিভিন্ন ধরণের বোমা উদ্ধার হয়েছিল। ছিল ‘দেশি গ্রেনেড’-ও। পরিখার মত গোল করে মাটির তলায় প্রায় ড্রামে করে ওই বোমা রাখা ছিল। একইসঙ্গে মিলেছে বোমা তৈরির প্রচুর সরঞ্জামও। এই ডেরার খবর ছড়াতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন গ্রামবাসীরা। একটি বাড়িতে সিপিএমের কর্মীরা বোমা তৈরি করত, এই অভিযোগে ক্ষিপ্ত জনতা শনিবার একটি বাড়িতেও ভাঙচুর করে।
শনিবারের পর রবিবার সকালেও ওই এলাকায় সিপিএমের এক লোকাল কমিটির বাড়ির পিছনে বাঁশবাগান থেকে বোমা মিলতেই চাঞ্চল্য ছড়ায়। গ্রামবাসীরা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। সিআইডির বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডকেও খবর দেওয়া হয়। তারা গিয়ে প্রায় ১৪ ড্রাম বোমা উদ্ধার করে। গ্রামবাসীদের দাবি, গোটা এলাকায় তল্লাশি প্রয়োজন। তা না হলে সব বোমা ও বন্দুক উদ্ধার হবে না। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার প্রথমদিন থেকেই তল্লাশি চলছে। তবে যেভাবে গ্রামবাসীরা তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, বোমা উদ্ধারে সহায়তা করছেন, তাতে শীঘ্রই সমস্ত বোমা উদ্ধার করা যাবে বলে আশা করছে পুলিশ।
আমডাঙা বরাবরই লালদূর্গ ছিল। সিপিএম কেন সেখানে বোমা ও অস্ত্রের ভান্ডার তৈরি করেছিল? তৎকালীন স্পিকার হাসিম আবদুল হালিম আমডাঙারই বিধায়ক ছিলেন। তবে, ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হালিমসাহেব প্রায় হারতে হারতে জিতে গিয়েছিলেন। মাত্র ৬৪ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে প্রাক্তন সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী আব্দুস সাত্তারকে এই কেন্দ্রে জিতিয়েছিল সিপিএম। স্থানীয়দের দাবি, ক্ষমতা দখলে রাখতেই সিপিএম অস্ত্রাগার ও বোমার ভান্ডার তৈরি করেছিল। তাই এখনও মাটি খুঁড়লেই বেরাচ্ছে বোমার পর বোমা।