প্রগতিশীলতার ফল্গুধারা সিপিএমের সহজাত। বিবৃতি, মিডিয়া বাইট, পার্টি দলিল, থেকে বিদেশী সেমিনার-প্রগতিশীলতা আঁকড়ে থেকেই নিজেদের জাহির করে আলিমুদ্দিন। কিন্তু আদতে রক্ষণশীলতার অন্ধ ঘেরাটোপেই সেলিম, সুজন, রবীনদের মনন আটকে রয়েছে। গৌরব ঘোষের ঘটনা আবারও তা প্রমাণ করল। বেহালার গৌরব ঘোষকে জেএনইউ-এর নির্বাচনে এসএফআই প্রার্থী করে সারা দেশে সাড়া ফেলে দিলেও সিপিএম কিন্তু এখনও তাকে দলীয় প্রার্থী করেনি। এলজিবিটি কমিউনিটির আন্দোলনের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে সিপিএম অনেক বছর আগেই তাত্ত্বিক অবস্থান নিলেও, দলের অভ্যন্তরে এখনও সেই কজনই হাতেগোনা সমকামী সদস্য রয়েছে।
গৌরব অবশ্য মনে করেন এলজিবিটি কমিউনিটির প্রতি বামপন্থী দলগুলির সার্বিক মনোভাবের বদল হয়েছে। তাঁর কথায় ‘সমকামীদের নিয়ে সার্বিক মনোভাবের অনেক বদল হয়েছে। এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই তে সমকামীদের প্রতিনিধিত্ব অনেক বেড়েছে। কেরালায় রূপান্তরকামীদের নিয়ে পৃথক সংগঠন রয়েছে।’ প্রশ্ন হল, সিপিএম কি গৌরবকে দলীয় সদস্য করেছে? ঘুরিয়ে গৌরবের জবাব, ‘আমি এসএফআই সদস্য ও সক্রীয় কর্মী। সিপিএম সমর্থক।’
২০১৩ সালে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে এই গৌরবকে প্রার্থী করতে গিয়ে সিপিএমের অন্দরে প্রবল বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল তৎকালীন এসএফআই নেতৃত্বকে। গৌরব ঘোষিত সমকামী হওয়া সত্ত্বেও, কেন তাঁকে প্রার্থী করা হচ্ছে? সিপিএমের অন্দরে এই প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন এসএফআই- এর তৎকালীন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত বন্দোপাধ্যায়। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য রবীন দেব ও মৃদুল দে এ সিদ্ধান্তর তীব্র বিরোধীতা করেন। উদারপন্থী নেতা হিসাবে পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও শ্যামল চক্রবর্তী ও সুজন চক্রবর্তীও এসএফআই নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মৃদু আপত্তি তুলেছিলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল সমকামিতা নাকি আমজনতার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই সিপিএমের ছাত্র সংগঠন সমকামীকে ভোটে প্রার্থী করলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। ঋতব্রতকে তাই সেই সময় বহু তির্যক মন্তব্যের সম্মুখীন হতে হয় আলিমুদ্দিনে। তবুও তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন।
আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের একাংশের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও গৌরব প্রার্থী হতে পেরেছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি এসএফআই-এর পাশে দাঁড়ানোয়। তৎকালীন দিল্লি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পুষ্পেন্দ্র গ্রেওয়াল এসএফআই নেতৃত্বকে সমর্থন করেন। প্রকাশ কারাট-সহ সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্ব অনেক আগে থেকেই নীতিগত ভাবে সমকামী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানালেও, সিপিএমের অন্দরে প্রবল রক্ষণশীলতা রয়ে গিয়েছে এখনও। যদিও সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ‘এলজিবিটি কমিউনিটির আন্দোলনের প্রতি আমরা অনেক আগেই সমর্থন ব্যক্ত করেছি। বহু বছর আগে থেকে ডিওয়াইএফআই সহ সংগঠনে সমকামীদের সদস্য করা হচ্ছে।’ কিন্তু সিপিএম কি এঁদের সদস্য করছে? উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন সেলিম। আসলে উত্তর নেই। প্রগতিশীলতার আধুনিক মোড়কে, পুরনো ধ্যানধারণা ও রক্ষণশীলতাতেই স্বাচ্ছন্দ্য আলিমুদ্দিনের কেতাবী মাতব্বরেরা।