২২ বছরের পুরনো একটি মামলায় হঠাৎই গুজরাটের প্রাক্তন আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাটকে গ্রেফতার করল গুজরাটের সিআইডি। ১৯৯৬ সালে বনসকথার পুলিশ সুপার থাকাকালে নিষিদ্ধ মাদক রাখার অভিযোগে রাজস্থানের এক আইনজীবী সুমের সিং রাজপুরোহিতকে গ্রেফতার করেন ভাট। প্রাক্তন আইপিএস অফিসারের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে সিআইডির তরফে ডিজিপি(অপরাধ) আশিস ভাটিয়া বলেন, ‘৩-৪ মাস আগে এই ঘটনার তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল গুজরাত হাইকোর্টের তরফে। এরপর আমরা বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেছিলাম। তদন্তে উঠে এসেছে যে, সঞ্জীব ভাট ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা করেছিলেন। ওঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য হেফাজতে নিয়েছি। মোট ৭ জনকে আটক করা হয়েছে।’ সিআইডির দাবি, ১৯৯৬ সালে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা করার অভিযোগে সঞ্জীব ভাটের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন আইনজীবী সুমেরসিং রাজপুরোহিত। সম্প্রতি এ ঘটনার তদন্তের জন্য সিআইডিকে বিশেষ তদন্তকারী দল(সিট) গঠন করতে বলা হয় গুজরাত হাইকোর্টের তরফে। ২২ বছর পর রাজস্থানের পালিতেও অভিযোগ জানান ওই আইনজীবী। কিন্তু হঠাৎ ২২ বছর পরেই তড়িঘড়ি ভাটকে গ্রেপ্তার করা হল কেন? এ প্রশ্নে মুখে কুলুপ এঁটেছে সিআইডি কর্তারা। তবে কি এরমধ্যে জড়িয়ে আছে মোদী, অমিত শাহদের কোনও স্বার্থ?
প্রসঙ্গত, বর্তমানে সঞ্জীব ভাট একটি বিক্ষুব্ধ নাম। বারবার তিনি মোদী তথা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সমালোচনা করেছেন। এবছর ফেব্রুয়ারি মাসেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিশানা করেছিলেন ভাট। মোদিকে নীরব মোদী, মেহুল চোকসিদের ‘গডফাদার’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর নিজস্ব টুইটার হ্যান্ডেলে এই নিয়ে আক্রমণও শানিয়েছেন সেসময়। ব্যঙ্গ করে একটি বংশপঞ্জী বানিয়ে, তা সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়েও ছিলেন তিনি। যেখানে দেখা গেছিল শিল্প মহলের দুর্নীতিবাজরা কে কার সঙ্গে কী ভাবে আত্মীয়তার সম্পর্কে জুড়ে আছেন। কে নেই সেই তালিকায়! আদানি গ্রুপের কর্তা থেকে শুরু করে নীরব মোদি, মেহুল চোকসি-রা তো ছিলেনই, সেইসঙ্গে ছিলেন আম্বানি ভাইরা এবং শিল্পপতি মেহতা পরিবার। সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হওয়া বিক্রম কোঠারিও ছিলেন সেই পঞ্জীতে। তবে ভাট তাঁর পোস্ট করা সেই বংশপঞ্জীতে প্রধানমন্ত্রী মোদীকেই সবার উপরে রেখেছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, এই সব ঋণ খেলাপি শিল্পপতিদের ‘গডফাদার’ আসলে নরেন্দ্র মোদীই। এমনকি, পোস্টে ক্যাপশন লিখতে গিয়েও প্রধানমন্ত্রীকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করে লিখেছিলেন, ‘একদিক থেকে ভালো যে তাঁর কোনও ঔরসজাত সন্তান নেই, নাহলে দেশের অর্থনীতি এক্কেবারে ধসে যেত।’
সঞ্জীব ভাটের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর সাপে-নেউলে সম্পর্ক কারও অজানা নয়। ২০০২ সালের গোধরা দাঙ্গায় মোদীর বিরুদ্ধে আদালতে এফিডেভিট দায়ের করেছিলেন তিনি। সেই নিয়েও সেসময় কম বিতর্ক হয়নি। এমনকী সঞ্জীবকে ২০১৫ সালে পুলিশের চাকরি থেকেও বরখাস্ত করা হয়েছিল। ১৯৮৫ সালে বোম্বে আইআইটি থেকে এমটেকের ডিগ্রি পেয়েছিলেন সঞ্জীব। এরপর আইপিএস হয়ে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন তিনি। কিন্তু, বরাবরই বিতর্কে থেকেছেন এই নীতিপরায়ণ পুলিশ অফিসার। একাধিকবার নানা গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। নানাভাবে ফাঁসানো হয়েছে তাঁকে। তাঁর চরিত্রের এই একরোখো ভাবটা দেশবাসী প্রথম প্রত্যক্ষ করে ২০০২ সালের গোধরা দাঙ্গার পরে। সঞ্জীব গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের টেনে আদালতে নিয়ে এসেছিলেন।
সেই গোধরার সময় থেকেই নরেন্দ্র মোদীর বিরোধী বলে পরিচিত ভাট কি তবে এই কারণেই গ্রেফতার হলেন? প্রশ্ন বিরোধীদের। তাঁরা বলছেন, প্রকাশ্যে বিজেপি সরকার ও মোদীর বিরুদ্ধে মুখ খুললেই জেলে যেতে হচ্ছে সকলকে। দুদিন আগে যেমনটা হয়েছিল তামিলনাড়ুর গবেষণারত ছাত্রী সোফিয়ার ক্ষেত্রে। বিরোধীদের এমন অভিযোগের কোনও সদুত্তর মেলেনি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। তবে ভাট- এর এই গ্রেফতারির ঘটনায় একটা বিষয়ই প্রমাণ হয় যে, মোদী বা কেন্দ্রের দিকে কেউ আঙুল তুললেই, যেন তেন প্রকারেণ গ্রেফতার করা হবে তাঁকে। প্রয়োজনে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়েও। এ যেন এক অঘোষিত জরুরী অবস্থা চলছে দেশে, যেখানে জনগণের কোনও বাকস্বাধীনতা নেই। আছে ‘আচ্ছে দিন’।