বিশ্ব বাজারে মন্দার দোহাই দিয়ে টাকার পতনে য়তই নানা যুক্তি খাঁড়া করুক না কেন্দ্র, এই মুহূর্তে টাকার দাম বাড়ার কোনও লক্ষণ নেই। বিশেষজ্ঞরাও কোনও আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না। কারণ, চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তেলের দাম তড়তড়িয়ে বাড়ছে। ডলারের দাম বাড়ায় আরও বেশি ট্যাঁকের কড়ি খরচ করে তেল আমদানি করতে হচ্ছে ভারতকে। যার ফলে মুদ্রাস্ফীতিও বেড়ে চলেছে। কেন্দ্রের আর্থিক বিষয়ক সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ জানিয়েছিলেন, তুরস্কের আর্থিক দুরাবস্থার কারণে টাকায় প্রভাব পড়েছে। এটা সাময়িক বিষয়। দ্রুত সেই অবস্থা কাটিয়ে উঠবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা গর্গের এই মন্তব্যে আশ্বস্ত হতে পারছেন না।
বিরোধী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী এক সময়ে মনমোহন সরকারকে উঁচু ডলারের দর নিয়ে নিয়মিত দুষতেন। এখন আক্রমণের মুখে তিনি নিজে। টাকার ক্রমাগত পতন মোদীর অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ফানুসে পেরেক ঠুকেছে। এ দিনও টাকার পতন কেন্দ্রের আর্থিক নীতির ব্যর্থতা বলে তোপ দেগেছে কংগ্রেস। কটাক্ষের সুরে তারা বলেছে, স্বাধীনতার পরে এমন ‘আচ্ছে দিন’ আগে দেখেনি দেশ। নরেন্দ্র মোদী রেকর্ড গড়ে দিলেন। তীব্র নিন্দা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সকলে বলছেন, এতে পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়বে। ভয় যে অমূলক নয় তার প্রমাণ, শুক্রবারই রান্নার গ্যাসের দাম বাড়া।
বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও এখন ভারতে বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। চিন ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে বিবাদ শুরু হওয়ায় আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় উত্তেজনা রয়েছে। দেশীয় ব্যাঙ্কগুলি ঋণের ওপরে সুদের হার বাড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের আশ্বাস ছিল ৬৮-৭০ টাকায় থিতু হবে ডলারের দাম। অথচ এর মধ্যেই তা ছুঁয়ে ফেলল ৭১ টাকা। ফের উঠল ২৬ পয়সা। ডলারের সাপেক্ষে এর আগে টাকা কখনও এই তলানিতে নামেনি। প্রশাসনের অন্দরেই গুঞ্জন, ডলার যদি ৭৫ টাকাতেও পৌঁছে যায়, আশ্চর্যের কিছু নেই। অনেকের আবার উদ্বেগ, তা ৮০ ছুঁয়ে ফেলবে না তো! সব মিলিয়ে মোদী সরকার চরম অস্বস্তিতে।
বাণিজ্য যুদ্ধে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির উপর কড়া মার্কিন নীতির জেরে বেশি প্রভাব পড়ছে জ্বালানি তেলের দামে। তুরস্কের ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামে চড়া আমদানি শুল্ক বসিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে দেশের মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে তড়তড়িয়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যাঙ্কের সুদ বাড়ানোর পথে হাঁটতে চাইছে না এর্দোয়ান সরকার। ইরানের উপর মার্কিন আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জেরে ধাক্কা খেয়েছে তেলের বাজারে। পাশাপাশি ভেনেজুয়েলাতেও চরম আর্থিক দুরাবস্থার মুখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব বাজারে জ্বালানির তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নিয়ন্ত্রণে নেই ডলার নিরিখে টাকার দামও।
দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে সোমবার ফের নতুন তলানি ছুঁল টাকার দাম। ২১ পয়সা উঠে ডলার দাঁড়াল ৭১.২১ টাকা। আর তার পরেই বিভিন্ন মহলে আরও কিছুটা জোরালো হল প্রশ্ন – রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এখনও চুপ কেন? হালে ডলারের সাপেক্ষে এশিয়ায় সব থেকে দ্রুত দর পড়েছে ভারতীয় মুদ্রারই। ফলে খরচের বহর বেড়ে চলেছে আমদানিকারীদের। এমন পরিস্থিতিতে আমদানি নির্ভর শিল্পের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। বাড়ছে মূল্যবৃদ্ধি আরও মাথা তোলার আশঙ্কা। দুশ্চিন্তা বাড়ছে ঘাটতি নিয়ে। ফলে এই পরিস্থিতিতেও মুখে কুলুপ এঁটে থাকায় প্রশ্নের মুখে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক সময় টাকা দ্রুত জমি খোয়ালে, বাজারকে আশ্বাস দিতে মুখ খোলে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। এখনও তেমনটা না হওয়ায় তাই কিছুটা অবাক তাঁরা।