নিজের চরকায় তেল দাও! এই কথাটি উনবিংশ শতকে বেশ শোনা যেত, কারণ অন্যান্য কার্যকালাপের সঙ্গে সঙ্গে, মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত জীবনেও ব্রিটিশ আইনের অনধিকার চর্চা ছিল অবাধ। তার মূল কথা হল, সমকামিতা প্রকৃতিবিরুদ্ধ! এই সময়ই বেশ কিছু মানুষের মুখে এই কথাটি উঠে আসত। আর সেই আইনটিই পরবর্তীকালে সেকশন ৩৭৭ নামে রয়ে গিয়েছিল ভারতের সংবিধানে। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, আমরা এই আইনটি পরিবর্তন করতে পারি না। সেই কাজ করতে পারে পার্লামেন্ট । আর ঠিক ৫ বছর পর ভারতবর্ষে সমকামিতা আর কোনও অপরাধ নয় তা নিয়ে এক ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে স্পষ্ট জানাল সুপ্রিম কোর্টের ৫ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। অর্থাৎ বাতিল হয়ে গেল ভারতীয় সংবিধানের ব্রিটিশ আমলের ৩৭৭ ধারা ।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় সংবিধানের ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী প্রকৃতি বিরুদ্ধ যেকোনও ধরনের যৌনতাকেই অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছিল। যার ফলে এদেশে সমকামিতাও ছিল নিষিদ্ধ। ৩৭৭ ধারায় প্রকৃতি বিরুদ্ধ যৌনাচারের জন্য ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা ঘোষণার সংস্থান ছিল। কিন্তু এদিনের রায়ের ফলে ভারতে সমকামিতা আর কোনও অপরাধ রইল না। একযোগে বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, ব্যক্তি স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান শর্তই হল ব্যক্তিগত পছন্দের স্বীকৃতি।
মূলত, ২০০১ সালে দিল্লি হাইকোর্টে প্রথমবার ভারতীয় সংবিধানের ৩৭৭ ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে সমকামিতার পক্ষে সওয়াল করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নাজ ফাউন্ডেশন। ২০০৯ সালে দিল্লি হাইকোর্ট , সমকামিতার পক্ষেই রায় দেয়। দুজন প্রাপ্তবয়স্কের তাদের স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্কের মধ্যে নাক গলানোকে ব্যক্তি পরিসরের অধিকারকে লঙ্ঘন করা বলেই রায় দিয়েছিল আদালত। কিন্তু ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টে সেই রায় খারিজ হয়ে যায়। ৩৭৭ ধারার সাংবিধনিক বৈধতা আছে বলে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ফের শুরু হয় আইনি লড়াই। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর এদিন রায়ে অবশেষে স্বস্তির হাসি সমকামিতার স্বীকৃতির পক্ষে সওয়ালকারীদের মুখে।