সেই স্বাধীনতার পর থেকেই কাশ্মীরের জন্য পৃথক সংবিধান চালু রয়েছে দেশে। সেই নিয়ে বেশ কয়েকবার বিতর্কও তৈরি হয়েছে। মামলাও চলছে সুপ্রিম কোর্টে। এই অবস্থায় এই পৃথক সংবিধান থাকা নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। এতদিন বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল নিছক রাজনৈতিক স্তরে। রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ছিল মতান্তর ও চাপানউতোর। কিন্তু ভারত সরকারের কোনও পদস্থ আধিকারিক এই বিতর্কে প্রত্যক্ষভাবে কখনও যুক্ত হননি এর আগে। দোভালের ক্ষেত্রে এবার সেটিই হল। সামান্য আধিকারিক নয়, দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা যখন স্বয়ং এই প্রশ্ন উত্থাপন করলেন সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী, কাশ্মীরের বাসিন্দারা কিছু বিশেষ সুবিধা পান, তখন জল ঘোলা হওয়ারই কথা। দোভালের মতে, কাশ্মীরের ক্ষেত্রে এমন কোনও বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। একই দেশে পৃথক সংবিধান থাকারও কোনও প্রয়োজন নেই। ওই ব্যবস্থা অনেক আগেই, বস্তুত শুরু থেকেই বন্ধ হওয়া উচিত ছিল। কাশ্মীরের ভারতভুক্তির চুক্তিস্বাক্ষরের পর থেকে যে বিষয়টি নিয়ে চলছে বিগত ৭১ বছর ধরে লাগাতার বিতর্ক, মামলা, আন্দোলন, সেই ৩৭০ নং ধারা, ৩৫ এ ধারা নিয়ে ফের সরকারি স্তরের উচ্চপর্যায়েই কেন নাড়াচাড়া শুরু হল তা নিয়ে কৌতুহলের সঞ্চার হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
মঙ্গলবার সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে নিয়ে একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্যেই সংবিধান তৈরি হয়েছিল। আর সেই সংবিধান দেশের সমস্ত জায়গার উপর কার্যকর। পৃথক সংবিধান থাকা সার্বভৌমত্বের পক্ষে ক্ষতিকারক।’ তাঁর এই বক্তব্যের পরেই দেশজুড়ে বিতর্কে ঝড় উঠেছে। পরে দোভাল আরও স্পষ্ট করে বলেন, স্বাধীনতার পর ৫৬০টি দেশীয় রাজ্য সবই ভারতের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সংযুক্ত হয়। ফলে সেখানে একটিই সংবিধান কাম্য। কাশ্মীরের জন্য বিশেষ সাংবিধানিক স্ট্যাটাস এবং ৩৫ এ ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরবাসীর জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধার পক্ষে বিপক্ষে মত বিগত ৭১ বছর ধরেই চলছে। ৩৫ এ ধারা অনুযায়ী অন্যান্য রাজ্যে বসবাসকারী ভারতীয়দের তুলনায় কাশ্মীরিরা আগে চাকরির সুযোগ পাবেন।স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয়েও প্রতিবন্ধকতা আছে। এই ৩৫ এ ধারা নিয়ে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে চলছে মামলা। বিষয়টি এতই স্পর্শকাতর যে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট এই মামলাটির শুনানির দিন ধার্য করার পর জম্মু-কাশ্মীর সরকার (রাজ্যপাল শাসিত) ও কেন্দ্রীয় সরকার একই সুরে সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করে এখনই যেন এই শুনানি করা না হয়। কারণ আগামীদিনে কাশ্মীরে পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এর মধ্যে আবার ৩৫ এ ধারা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে কাশ্মীরে আগুন জ্বলতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট গুরুত্ব বিবেচনা করে শুনানির দিন পিছিয়ে দিয়েছে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। বিজেপি বিরোধী দল হিসাবে আগাগোড়াই কাশ্মীরের ৩৭০ ধারার অবলুপ্তির দাবিতে সরব হয়েছে। এমনকী. বিজেপির অন্যতম প্রাণপুরুষ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ১৯৫৩ সালে কাশ্মীর যাত্রা করেছিলেন এই ‘এক প্রধান, এক নিশান, এক সংবিধান’ দাবিতেই। কিন্তু গত বছর মেহবুবা মুফতির সঙ্গে জোট গড়ে বিজেপি স্বাধীন ভারতে প্রথমবার কাশ্মীরে ক্ষমতায় এলেও সেই নিজেদের ইস্যুতেই নীরব ছিল। ৩৭০ নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্যই করেনি। এখন সেই জোট ছিন্ন হয়েছে। আবার তাই সেই ইস্যু ফিরে এল কিনা তা নিয়ে জল্পনা চলছে।
ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত অজিত দোভালের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু তা না হলে ধরে নিতে হবে দোভাল যা বলেছেন তাতে কেন্দ্রের সায় রয়েছে।’ আবার পিডিপি নেতা রফি আহমেদ মীর বলেন, ‘আমার মনে হয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে কারোর এরকম মন্তব্য করা ঠিক নয়। এসব করলে দেশের মানুষের কাশ্মীর সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব তৈরি হবে।’ বিরোধী দলগুলি দাবি করছে, লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি ফের তাদের পুরনো ধর্মীয় ইস্যুগুলিতেই ফিরে যাচ্ছে। আবারও সেই হিন্দুত্ববাদ, রামমন্দির, ৩৭০ নং ধারার মত প্রসঙ্গ তুলে দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে তারা।