উন্নয়ন এবং শান্তি।এই দুই শব্দবন্ধেই পাহাড়ের রাজনীতিতে আরও একবার নতুন মাত্রা সংযোজন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৮ মাস পর দার্জিলিঙে পা রেখে কার্যত ‘শান্তি’র দূত হয়ে বার্তা দিলেন দিদি। বললেন, ‘পাহাড়ের উন্নয়নে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সবরকম সহযোগিতা করবে রাজ্য সরকার। দার্জিলিঙের হাসিমুখ দেখতে চাই আমি’। মমতা যখন এ কথা বলছেন, তখন তাঁর পাশে রয়েছেন জিটিএ-র চেয়ারম্যান বিনয় তামাং, ভাইস চেয়ারম্যান অনীত থাপা এবং জিএনএলএফ সভাপতি, সুবাস ঘিসিং-পুত্র মন ঘিসিং। রয়েছেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেনও। এছাড়াও জিটিএ-র বহু সদস্য এবং রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকেরা।
দার্জিলিঙয়ে এখন হঠাৎ রোদ, হঠাৎ বৃষ্টি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে বাধা হতে পারেনি আবহাওয়া। সন্ধ্যায় বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে সড়কপথে সরাসরি দার্জিলিঙয়ে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যে চলতে থাকে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। গোটা যাত্রাপথে তাঁকে একঝলক দেখতে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাস্তার দু’ধারে ভিড় জমিয়েছিলেন মানুষ। হাতে ফুল, প্ল্যাকার্ড। সন্ধ্যা নামতেই জ্বলে উঠল মশাল। আর মুখে ‘দিদি-দিদি’ স্লোগান।
রোহিণী, টোলগেট, কার্শিয়াং, সোনাদা, ঘুম- সর্বত্র উৎসুক জনতার ভিড়। মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় পাহাড়ে পৌঁছয় অন্ধকার নামার পর। তবুও ভানুভবন আর রাজভবনের সামনে অপেক্ষমাণ জনতা।বৃষ্টির মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীকে ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের মাধ্যমে স্বাগত জানায় ‘টিবেটান রিফিউজি সেন্টার’। তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় স্মারক।
একসময় অশান্ত হয়ে উঠেছিল পাহাড়। একদিকে গুরুং ও তাঁর সহযোগীদের হিংসাত্মক আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কৌশলগত অবস্থান, অন্যদিকে সমতলের উন্নয়নের ধারাকে সমানভাবে পাহাড়েও সচল করার উদ্যোগ-এই দুইয়ের মিশেলে আজকের পাহাড় ফের প্রাণচঞ্চল। পাহাড় যে এখন শান্ত, রাতে দার্জিলিং এসে সেই কথাই প্রমাণ করলেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর সফর ঘিরে তাই পাহাড় জুড়ে সাজো সাজো রব। রাস্তার মোড়ে মোড়ে স্বাগত তোরণ, ব্যানার, ফ্লেক্স। সেখানে পাহাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। ম্যাল চত্বরে জোর কদমে চলছে মঞ্চ বাঁধার কাজ। ১৯৫০ সাল থেকেই এখানকার প্রান্ত পরিষদ পাহাড়ের ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জানিয়ে আসছে। এতদিনে সেই দাবি পূরণ হতে চলেছে। এই মঞ্চ থেকেই আগামীকাল অর্থাৎ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ম্যাল-কে সাজিয়ে তোলার কাজের সূচনা-সহ নানা কর্মসূচি।
আজ মঙ্গলবার, জিটিএ-এর সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। পাহাড়ে যাবতীয় উন্নয়নযজ্ঞ পরিচালনা করছে জিটিএ। সেই উন্নয়ন প্রকল্পের পর্যালোচনা বৈঠক করবেন মমতা। জিটিএ ছাড়াও পাহাড়ের উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী তৈরি করেছেন ১৫টি পৃথক জনগোষ্ঠীর জন্য আলাদা আলাদা উন্নয়ন পর্ষদ। সেগুলির কাজকর্ম ও প্রকল্প বাস্তবায়নের গতিও খতিয়ে দেখবেন তিনি। বিনয় তামাং বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ সামনে রেখেই উন্নয়নের কাজ চলবে’।