দু’দিন বাদে কলকাতা লিগের ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের মুখোমুখি হবে মোহনবাগান। শহর জুড়ে ডার্বির টিকিট নিয়ে হাহাকার ও রীতিমতো ঝামেলা বেধে গেলেও চাপহীন বাগান ব্রিগেড। লাল–হলুদে যখন নিজেদের কৌশল গোপন রাখতে ক্লোজড ডোর অনুশীলন, তখন বাগান কোচ শঙ্করলালের অনুশীলনে চেনা পরিচিত বল নিয়ে কসরত, উইং প্লে, সিচুয়েশন প্র্যাকটিস, শুটিংয়ের মাঝে হেনরি, ডিকা, কিংসলেকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে হালকা মেজাজের আলোচনা। গত বছর আই লিগের শেষ দুটো ডার্বির প্রথমটায় মোহনবাগান জিতেছিল কিংসলের গোলে। ফিরতি ডার্বিতে জয় এসেছিল ডিপান্ডার জোড়া গোলে। এদিন দু’জনকেই দেখা গেল হাসিখুশি মেজাজে কোচের সঙ্গে কথা বলতে, অনুশীলন সারতে। পরে সাজঘরে ফিরে হেনরির জন্মদিনের কেক কাটা হল বেশ হইচই করে। কোচ শঙ্করলাল থেকে ফুটবলারদের শরীরী ভাষায় কোথাও যেন একটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস চুঁইয়ে পড়ছে। গতদিন অনুশীলন শেষে বাগান কোচ বলেছিলেন, যাঁরা এই দলে নতুন, তাঁদের ডার্বির গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বোঝানোর কাজটাও শুরু করেছেন তিনি ও দলের সিনিয়র ফুটবলাররা। তবে সেটা ফুটবলারদের মোটিভেট করতে, চাপে ফেলতে নয়। প্রতিটি ডার্বিই নতুনভাবে ধরা দেয় সামনে। সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়। সল্টলেকের ট্রেনিং পিচ থেকে ঘরে ফেরার মুখে ডিপান্ডাকে সেলফির জন্য ঘিরে ধরেছিলেন একদল সমর্থক। তারই মাঝে ডিপান্ডার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কাল ডার্বিতে গোল করে বার্থ ডে বয় হেনরিকে উপহার দেবেন? ডিপান্ডার জবাব, ‘আমি গোল করব কে বলল? আমাদের দলে গোল করার অনেক লোক। হেনরি গোল করে আমাকে উপহার দিতেও তো পারে।’ কম কথার মানুষ হেনরির ডার্বি নিয়ে প্রতিক্রিয়া, ‘এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। আমি নিজের সেরা দেওয়ার চেষ্টা করব।’ রক্ষণে দলের স্তম্ভ কিংসলেও বিন্দাস মেজাজে। বলেন, ‘জানি তো এটা ডার্বি। তা নিয়ে বাড়তি কোনও চাপ নেই। অন্য ম্যাচ যে গুরুত্ব দিয়ে খেলি তেমনই খেলব।’ গত মরশুমে ডার্বি ম্যাচেই চ্যাম্পিয়নশিপের ফয়সালা হয়েছিল শিলিগুড়িতে। গোলপার্থক্যে খেতাব হাতছাড়া হয় বাগানের। সেটা মাথায় রেখে অধিনায়ক শিলটনের প্রতিক্রিয়া, ‘ওটা ছিল লিগের শেষ ম্যাচ। এবার ডার্বি হচ্ছে মাঝে। ডার্বি জেতাটা সবসময় জরুরি, কিন্তু এটা জিতলেই আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাব এমন নয়, তবে নিঃসন্দেহে মানসিক ও পয়েন্টের দিক দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকব। বাজে ফল হলে ঘুরে দাঁড়ানো সমস্যা হয়ে যায়।’ ইস্টবেঙ্গলে আমনার পাশাপাশি বিশ্বকাপার জনি অ্যাকস্টা থাকাটা কি বড় ফ্যাক্টর? শিলটনের জবাব, ‘প্রতিপক্ষে কে আছে, সেটা ভেবে নিজেদের চাপ বাড়াতে যাব কেন? আমনা, অ্যাকস্টা বড় ফুটবলার, তবে ওদের কথা আলাদা করে না ভেবে সেরাটা দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি রবিবার।’ পিয়ারলেস দলে খেলা ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর বিশ্বকাপার অ্যান্টনি উলফ এদিন সল্টলেকের অন্য মাঠে হাজির ছিলেন দিল্লি ডায়নামোজের সঙ্গে প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলতে। তাঁর মতে, ডার্বিতে কিছুটা হলেও এগিয়ে ইস্টবেঙ্গল। বলেন, মোহনবাগানের থেকে ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠের গভীরতা বেশি আমনার মতো গেমমেকারের জন্য। তাছাড়া ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্স আরও জমাট হবে অ্যাকস্টার জন্য। মোহনবাগানে ডিপান্ডা গোলটা ভাল চেনে। কিন্তু তার জন্য ওকে গোলের বল ফিড করতে হয়। ইস্টবেঙ্গল ডিপান্ডাকে বলের জোগানোর রাস্তা বন্ধ করে দিলে মোহনবাগান আটকে যাবে। উলফ অবশ্য মনে করেন , ম্যাচ গোলশূন্য বা ১–১ ফলে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।