গণপিটুনির ঘটনায় দেশের সম্মানহানি হচ্ছে বলে চিনে মন্তব্য করেছিলেন কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী। গণপিটুনি রোখা নিয়ে আইন সংশোধনের কথাও ভাবা হচ্ছে বলে ক’দিন আগেই খবর এসেছিল। গণপ্রহারে মৃত্যুর মতো ঘটনা এড়াতে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীও। গণপিটুনি নিয়ে তৎপর হয়েছে সুপ্রিম কোর্টও। এতকিছুর পরও দেশের এই মারণব্যাধি যে কিছুতেই সারছে না, তার আবারও আঁচ পাওয়া গেল। আবারও মোষ চোর সন্দেহে গণপ্রহারে প্রাণ হারালেন দেশের এক নাগরিক।
এবার অকুস্থল উত্তর উত্তর প্রদেশের বরেলি। ভোলাপুর হিন্দোলিয়া গ্রামে মোষ চোর সন্দেহে বেধড়ক মারধর করলো গ্রামবাসীরা। মোষ চোর সন্দেহে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়াল। গতরাতে বেরিলির ভোলাপুর হাদোলিয়া গ্রামে শাহরুখ নামে বছর কুড়ির ওই যুবককে মোষ চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার অভিনন্দন সিং।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গতরাতে তিন যুবকের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন শাহরুখ। সেসময়ই তাঁদের দেখে জড়ো হন একদল স্থানীয় যুবক। মোষ চোর সন্দেহে এরপরই শাহরুখকে বেধড়ক মারধর করা হয়। মারধরের সময় কোনওরকমে শাহরুকের সঙ্গীরা পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন। গুরুতর জখম অবস্থায় শাহরুখকে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
দুবাইয়ে শাহরুখ দর্জির কাজ করত বলে জানা গিয়েছে। গণপ্রহারের জেরেই মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। উভয়পক্ষের তরফেই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ২০-২৫ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন শাহরুখের ভাই। শুধু তাই নয়, শাহরুখের তিন সঙ্গীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ জানানো হয়েছে। অন্যদিকে জনতার একাংশের তরফেও মোষ চোরের অভিযোগে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
শাহরুখের দাদা ফিরোজ জানান, ‘‘শাহরুখ বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন। রাতে বাড়ি না ফেরায় আমরা ভেবেছিলাম, সকালে ফিরবেন। কিন্তু সকালে পুলিশ ফোন করে আমাদের মৃত্যুর খবর দেয়।’’ মোষ চুরির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে ফিরোজ বলেন, শাহরুখ স্বাবলম্বী। দুবাইতে ভাল চাকরি করে। এর আগে দিল্লি, মুম্বইতেও কাজ করেছে। কখনও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও খারাপ কাজের অভিযোগ ওঠেনি। মোষ চুরির অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’’
তবে এই ঘটনা ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসে একেবারেই বিরল নয়। বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক কারণ দেখিয়ে গণপিটুনির মাধ্যমে হত্যা করা প্রায় অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে উত্তর ভারতের হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলির মধ্যে এই প্রবনটা বেশি। এই নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বুদ্ধিজীবী থেকে সাধারণ মানুষ বারে বারেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্নভাবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি, এদিনের ঘটনা এটাই প্রমান।