ঠিক ২ বছর আগে, ৩১ আগস্ট অর্থাৎ আজকের দিনেই এসেছিল সিঙ্গুর মামলার ঐতিহাসিক জয়। দেশের শীর্ষ আদালত পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণকে ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করে। বিচারপতি গোপাল গৌড়া এবং বিচারপতি অরুণ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ বর্তমান তৃণমূল সরকারকে কৃষকদের অধিগ্রহণ করা জমি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। ২০১৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরের চাষিদের হাতে জমির পড়চা ও ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেন।
সেই ঐতিহাসিক রায়ের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে একটি টুইট বার্তায় সমস্ত কৃষকদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লিখেছেন, ‘২০১৬ সালে ৩১শে আগস্ট দেশের সুপ্রিম কোর্ট, একটি ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন যে, সিঙ্গুরে বামফ্রন্ট সরকার দ্বারা জমি অধিগ্রহণ অবৈধ ছিল। সেই ঐতিহাসিক রায়ের দ্বিতীয়বার্ষিকীতে দেশের সব কৃষকদের আমার শুভেচ্ছা জানাই। আমরা সবসময় তাদের সংগ্রামে তাদের পাশে আছি’।
২০০৬ সালে টাটা গোষ্ঠীর ন্যানো গাড়ি তৈরির কারখানা গড়তে সিঙ্গুরে প্রায় এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার। কৃষকের জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকে বাংলার রাজনীতি কী ভাবে নতুন বাঁক নিয়েছে, সে ইতিহাস কারও অজানা নয়। ক্ষমতায় আসার পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আইন পাশ করান রাজ্য বিধানসভায়। কিন্তু সে আইনকে কলকাতা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ জানা টাটা গোষ্ঠী। লড়াই গিয়ে শেষ হল সুপ্রিম কোর্টে। ২০০৬ সালে জমি অধিগ্রহণ হওয়ার ১০ বছর পর সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ঘোষণা করল, বামফ্রন্ট সরকারের তত্ত্বাবধানে হওয়া সেই অধিগ্রহণ অবৈধ ছিল। সে সময় দেশে যে জমি আইন কার্যকর ছিল, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার জমি অধিগ্রহণের সময় সেই আইন মানেনি বলে সুপ্রিম কোর্ট মত প্রকাশ করে। ১২ সপ্তাহের মধ্যে সিঙ্গুরের কৃষকদের হাতে জমির মালিকানা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
সিঙ্গুর এখন আবার ফিরে পেয়েছে স্বরূপ।হয়ে উঠেছে শস্যভাণ্ডার। সিঙ্গুরের বিস্তীর্ণ জমিতে এখন হচ্ছে বোরো ধানের চাষ। শুধু ধান, আলু নয়, একইসঙ্গে ডাল, ভুট্টা, তিল, সরষে–সহ নানা সবজির চাষও হচ্ছে সমানতালে। কৃষকের মুখে ফিরে এসেছে আগের হাসি।