পুনে, মুম্বই, দিল্লি, ফরিদাবাদ, হায়দরাবাদ ও রাঁচি, প্রভৃতি শহর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিশিষ্ট ৬ মানবাধিকারকর্মীকে। প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র, মাওবাদী যোগ এবং ভীমা কোরেগাঁও হিংসায় ইন্ধন জোগানোর অভিযোগে তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।বিশিষ্ট কবি ভারাভারা রাও, আইনজীবী সুধা ভরদ্বাজ, সমাজকর্মী অরুণ ফেরেরা, গৌতম নওলাখা এবং ভার্নন গঞ্জালভেসের বিরুদ্ধে ‘আনলফুল অ্যাক্টিভিটিস প্রিভেনশন অ্যাক্ট (ইউএপিএ)’ –এ অভিযুক্ত করেছে পুনে পুলিশ।
এই মানবধিকার কর্মীদের গ্রেপ্তারের পরেই সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, তাঁদের কেন ইউএপিএ-তে অভিযুক্ত করা হল? দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাঁরা কী এমন ব্যাঘাত ঘটালেন, যে এই মারাত্মক আইনে জড়ানো হল মানবাধিকার কর্মীদের, এমনও প্রশ্নও উঠেছে। বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্রের পুনা পুলিশের এই পদক্ষেপকে ‘জরুরি অবস্থা’র সঙ্গে তুলনা করে সমালোচনায় মুখর হয়েছে সমাজের একাংশ। আজ, বুধবার শীর্ষ আদালতে এই গ্রেফতারির বিরুদ্ধে আবেদন করতে চলেছেন প্রবীণ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ।
চলতি বছরের পয়লা জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের পুনার ভিমা-কোরেগাঁও এলাকায় দলিত বনাম উচ্চবর্ণের সংঘর্ষ বাধে। ১৮১৮ সালে ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে মারাঠা-পেশোয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন দলিতরা। সেই যুদ্ধে পেশোয়াদের পরাজয় ঘটে। এরপর থেকেই ওই দিনটিকে দলিতরা নিজেদের বিজয় ও গৌরব দিবস হিসাবে পালন করেন। এই বছর ছিলো সেই বিজয়ের দ্বিশতবর্ষ উদযাপন। সেদিন সেখানে হাজির হয়েছিলেন অসংখ্য দলিত জনতা। কিন্তু, বেশ কয়েকটি ‘দক্ষিণপন্থী সংগঠন’ এই জয়কে ঔপনিবেশিক শক্তির আগ্রাসন হিসাবে চিহ্নিত করেছে। ফলে, তাঁরা মনে করে স্বাধীন দেশে এই ঘটনা আদতে কলঙ্কময় অধ্যায়। তাই তারা এই উদযাপনের বিরোধিতা করেন। এরপরই তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। ঘটনায় এক জনের মৃত্যু হয়।বিক্ষোভকারীরা প্রতিবাদে পথ অবরোধ করেন। ওই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগেই পুনে পুলিশ মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন শহর থেকে একাধিক মানবাধিকারকর্মীকে মাওবাদী যোগের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে।
জানা গেছে, ভারভারা রাও-এর বিরুদ্ধে মাওবাদীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগও রয়েছে। চলতি বছরের জুনে এলগার পরিষদের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে যে পাঁচ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়, তাদের এক জনের থেকেই একটি চিঠি উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। সেই চিঠিতেই না-কি ভিমা কোরেগাঁও কাণ্ডে ভারভারা রাও-এর যুক্ত থাকার বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। উল্লেখ্য, সে সময় সুধীর দাভালে, সুরেন্দ্র গাডলিং, মহেশ রাউত, রোনা উইলসন এবং সোমা সেনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল।