মঙ্গলবার বাংলার সমস্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ক্লাসের একটাই ঠিকানা— মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তির পাদদেশ। খোলা আকাশের নীচে তাদের ক্লাস নেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে রাজ্যব্যাপী ছাত্র সমাবেশের পরিকল্পনার আঁচ মিলেছে দলের শীর্ষ স্থানীয় এক নেতার ওই মন্তব্যে। এবার অবশ্য এই সমাবেশের দায়িত্ব তৃণমূল যুব কংগ্রেসের। সংগঠনের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় হতে চলেছে টিএমসিপির কেন্দ্রীয় সমাবেশ। আজ, সোমবার সকালে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা ট্রেনগুলিতে বিভিন্ন জেলার টিএমসিপি নেতা-কর্মীরা শহরে আসতে শুরু করবে।
আগামী বছরের গোড়াতে লোকসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে তরুণ প্রজন্মের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বিশেষ করে ২০১৯ সালের ভোট রাজ্যের রাজনীতিতেও তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা, দেশজুড়ে নরেন্দ্র মোদির এনডিএ সরকারের বিকল্প হিসেবে বিরোধীদের একজোট করতে তৃণমূল নেত্রী যে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন, তার প্রেক্ষিতে এই নির্বাচনী যুদ্ধ বাড়তি মাত্রা পেতে চলেছে। অন্যদিকে, ধর্ম ও সামাজিক বিভাজনের যে আবহ সঙ্ঘ পরিবারের রাজত্বে তৈরি হয়েছে, তার ভবিষ্যৎ পরিণতি কী হবে, তাও নির্ধারিত হয়ে যাবে আর মাস সাতেকের মধ্যে।
ঘটনাচক্রে লোকসভা ভোটের আগে এটাই সর্বশেষ কেন্দ্রীয় স্তরের ছাত্র সবাবেশ। তাই রাজ্য তো বটেই, সর্বভারতীয় রাজনীতির পটভূমিকায় বাংলার তরুণ সমাজকে বার্তা দেওয়ার সুযোগ যে পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগাবে তৃণমূল, তা প্রত্যাশিত। সেই লক্ষ্যেই কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই গোটা কর্মযজ্ঞের ভার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তুলে দেওয়া হয়েছে অভিষেকের হাতে। ছাত্র সংগঠনের এই কর্মসূচিতে প্রতি বছরই উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গে সব জায়গা থেকে পড়ুয়ারা যোগ দেয়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হবে না। উল্টে সমস্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাতে প্রতিনিধি মুখ্যমন্ত্রীর সভায় উপস্থিত থাকে, তা নিশ্চিত করার টার্গেট দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের টিএমসিপি ইউনিটকে। আজ সকাল থেকে দর্জিলিং মেল, তিস্তা-তোর্ষা এক্সপ্রেস, গৌড় এক্সপ্রেস, কাটিহার এক্সপ্রেসের মতো উত্তরবঙ্গের নানা জায়গা ছুঁয়ে আসা ট্রেনে হাজারে হাজারে টিএমসিপি কর্মী-সমর্থক শহরে আসবে। মধ্য কলকাতার বড়বাজার অঞ্চলের ধর্মশালাগুলিতে তাদের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিন বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, জয়া দত্তরা বড়বাজারে গিয়েছিলেন আগত ছাত্র প্রতিনিধিদের থাকার বন্দোবস্ত দেখভালের জন্য। সংগঠনের প্রাক্তন সভাপতি বৈশ্বানরের মতে, প্রতিষ্ঠা দিবসের জমায়েতে ভাবাবেগ কাজ করে। তাই শুধু বর্তমান পড়ুয়ারা নয়, প্রাক্তনীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতি বছর এই সভায় হাজির হন। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ছাত্র সংগঠনের কাজের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন। তাঁর দাবি, এবারের ছাত্র সমাবেশের রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। দার্জিলিং থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত সব এলাকার প্রতিনিধিকে সভায় আনতে সংগঠিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান টিএমসিপির প্রাক্তন শীর্ষ নেতা। শুধু পড়ুয়াদের জন্য নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও গেরুয়া রাজনীতির প্রতিরোধে ওই দিন দলনেত্রী কী বার্তা দেন, সেদিকে সবার নজর থাকবে বলে মনে করেন তিনি।