উত্তর ২৪ পরগনা জেলার, অন্যতম একটি বড় দুর্গোৎসব, পানিহাটি উদয়ন সংঘ-এর পুজো। তাদের পুজো এ বারে ৪৭তম বর্ষে পদার্পণ করল। এই বছর তাদের থিম, শিল্পী সোমনাথ-এর ভাবনায় ‘হাজার চুরাশির মা’। তবে চমকটা অন্য জায়গায়। এই গোটা থিম ভাবনাকে মাথায় রেখেই, তাদের পুজোর থিম সং তৈরী করেছেন স্বয়ং নচিকেতা চক্রবর্তী। হ্যাঁ সেই মানুষটাই, যিনি প্রায় চোদ্দ বছর আগে, এই বাংলায় বসে মাথা উঁচু করে বলতে পেরেছিলেন- ‘তুমি আসবে বলে দেশটা এখনও গুজরাট হয়ে যায়নি।’ থিম সংটির লিরিক্স নিয়ে কথা বলতে গেলে, প্রথমেই বলতে হয় দুটি লাইনের কথা- ‘কেন্দ্র দেয় না একটাকা, তাও স্বচ্ছ ভারত কই?/ ব্যাঙ্ক থেকে ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হয়, নেপোয় মারে দই।’ পুজোর গানে, এইভাবে এক কঠিন বাস্তবকে তুলে এনে, তাকে অশুভশক্তির সাথে তুলনা করার সৎ সাহস বোধহয় একমাত্র এই মানুষটির’ই আছে। আসলে দুর্গাপুজো বা অন্য কোনও উৎসবের মতো, রাজনীতি ও অর্থনীতিও যে মানুষের জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত; সে কথাই প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কলমে। আর এই গানের গায়েকির কথা বা সুরের কথা নতুন করে আর কীই বা বলব! যে শিল্পী দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে চলেছেন তাঁর গান দিয়ে, অস্ত্রের বিরুদ্ধে যিনি মাইক্রোফোন তুলে নিয়েছেন হাতে; যার অনির্বাণ, নীলাঞ্জনা, রাজশ্রীদের মধ্যে খুঁজে পেয়েছি আমরা নিজেদের, যে মানুষটি আজও স্বপ্ন দেখায় ‘একদিন ঝড় থেমে যাবে’ বলে, তার বিষয়ে ‘সব কথা বলতে নেই’, শুধু তার সাথে গলা মিলিয়ে গাইতে হয়- ‘আমি শান্তি চাই, শান্তি চাই’।
এই বছর তাঁর সঙ্গীত জীবনের ২৫ বছর উপলক্ষ্যে, থিম সং রিলিজের দিনই, তাকে একটি সংবর্ধনা দেওয়া হয় উদয়ন সংঘের তরফ থেকে। উদ্যোক্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তাদের তরফে সম্রাট চক্রবর্তী বলেন- “আমাদের এ বছরের থিম, হাজার চুরাশির মা; তবে এটা যদি কেউ মহাশ্বেতা দেবীর গল্প হিসাবে ভেবে থাকে, আমরা সেটা করিনি; এটা সিম্বলিক। সমস্ত বাংলার প্রতিনিধি, আমরা যদি দশ কোটি ধরি, তবে হাজার চুরাশির মা আজ এই দশ কোটির মা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাজার চুরাশিও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছিল, দশ কোটির ক্ষেত্রেও তাই। তাই এমন একটা বিষয়ের উপর, গান লেখা এবং গাওয়ার জন্য যদি কারও নাম ভাবতে বলা হয়, তাহলে নচিকেতা ছাড়া আমার সামনে কোনও অপশন নেই। আমরা ওই ‘তুমি আসবে বলে দেশটা এখনও গুজরাট হয়ে যায়নি’-র ফ্লেভারটাই আনতে চেয়েছি।”
পুজোর প্রায় মাসদেড়েক আগেই যে প্রার্থনা সঙ্গীত শোনা গেল নচিকেতার কন্ঠে; পুজোর কদিনও তা, মন্ডপে আগত প্রতিটি দর্শনার্থীকেই ভাবাবে, এ কথা বলাই বাহুল্য।।