পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ভাষন শুনছিলাম লাইভ স্ট্রিমিং এ৷ পুরুষমানুষ নাকি গ্রেসফুলি বৃদ্ধ হলে তার আকর্ষণ দ্বিগুণ বাড়ে। ইনি তো বাইশ গজের মতোই এখানে এই রতিভূবনের ও ক্যাপ্টেন। কত যে পাকিস্তানি আম্মির বুকে চিনচিন ব্যাথা বাড়লো আজ টিভিতে ওকে দেখে। ৬০ বছর বয়সে হাফ রিম চশমা পরে বসলেন কাগজ হাতে।
মেপে মেপে একঘন্টার ভাসন। তার মূল প্রতিপাদ্য নয়া পাকিস্তানের স্বপ্ন। আগেই বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ব্যবহার করবেন না। আজ বললেন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনত করবেন৷
ওর বক্তৃতা শুনে জানলাম, ওদেশে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ৫২৪জন মানুষ কর্মরত। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের জন্য ৮০টি গাড়ি বরাদ্দ আর ৩৩টি বুলেট প্রুফ ভ্যান মজুত ছিল। কাপ্তান সাহাব প্রথমদিনেই সিক্সার মেরে ঘোষণা করলেন, দুটো বুলেট প্রুফ গাড়ি আর দুজন কর্মী রাখবেন নিজের ব্যবহারের জন্য৷ বাকি সব নিলাম করে বিক্রি করবেন। সেই টাকা শিক্ষাখাতে ব্যবহার হবে৷
এমনিতে এদেশে ও রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সাংসদ, মন্ত্রীদের পাল্লায় সব প্রাসাদ বা সরকারি বাংলো। পাঁচ কামরা ছয় কামরার সব লুট্যিয়ান স্থাপত্য। এরপর আছে রাজ্যে রাজ্যে রাজভবন। পাখা, আলো, জল, গাড়ি, প্রজা, প্রহরী সবকিছু ট্যাক্স এর টাকায়। উঠিয়ে দেওয়া যায় কিনা জানা নেই কিন্তু একবার নাকি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সব সাংসদ বাংলো মেরামত করে আরো ঘর বানানোর। যাতে আরো সাংসদের থাকার জায়গা হয়। হোটেলে রাখতে না হয়। অবশ্যই মানা হয়নি৷
খান সাহেব আরো বললেন, দেশের মাদ্রাসাগুলোকে আধুনিক করে তুলবেন। ওখান থেকে যাতে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার উঠে আসতে পারে। এ সূত্রে জানিয়ে রাখি, ২৬/১১ র কাসাব ও অন্যান্যদের মাথা খাওয়া শুরু হয় এক মাদ্রাসা থেকেই। হাফিজ সঈদ ও মাদ্রাসায় মাদ্রাসায় জ্ঞান বিতরণ করে বেড়ান৷ তবে বলছি না সব মাদ্রাসাই সন্ত্রাসীদের আঁতুড়ঘর। এসব বললে এ দেশের অনেকে গোঁসা করবে। নাগপুরে চলে যাওয়ার ও দাওয়াই দিতে পারে৷
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পাকিস্তানিদের কাছে ইমরান সরকার আপিল করবে পাকিস্তানের জন্য ডলার দিয়ে সাহায্য করতে৷ অর্থনীতি মজবুত করতে।
আর একটা কাজ ইমরান করবেন বলে বলেছেন, তা হলো পর্যটন শিল্পের উন্নতিসাধন। বিদেশীদের আশ্বস্ত করবেন, রিসোর্ট বানাবেন গোটা দেশ জুরে। এটা সত্যি পাকিস্তানের ভৌগলিক সৌন্দর্য্য বিশ্ব কেবল একভাগ দেখেছে৷ গিলগিট, বালটিস্থান, বালুচ, সিন্ধ, পাক অধিকৃত কাশ্মিরের অনেক জায়গা বিশ্বমানের টুরিস্ট স্পট হতে পারে সন্ত্রাসের ভয় না থাকলে।
এসবই পাক প্রস্তাব৷ স্বাধীনতার ৭৩ বছর বাদে যদি কোন রাষ্ট্রপ্রধান এগুলোর মন দেন, ভালো লাগবেই৷ কেজরিওয়ালকে নিয়ে ও অনেকে এরকম স্বপ্ন দেখেছিল৷ প্রথম দিন এসেই বলেছিলেন বিদ্যুৎ এর বিল হাফ করে দেবেন। করে ও ছিল। এ ও দুম করে করে দিতে পারে।
তবে টেনশনে আছি।একজন ম্যাভারিক শো ম্যান প্রধানমন্ত্রী যার পকেটে পরমানু বোমা রাখা আর চোখে উচ্চাশা৷ ক্ষমতায় এসেছে সেনার কাঁধে ভর করে আর তালিবানদের পিঠে চড়ে৷ এরকম একটা কম্বিনেশন প্রথমদিনেই একটা সমাজতান্ত্রিক আর জাতীয়তাবাদী মেশানো তেলচুপচুপে দেশত্ববোধ খাইয়ে দিয়েছে পাকিস্তানিদের৷ এর পর কি করবে তা আল্লাই জানে।
কিন্তু আমার ভয় অন্য। ইমরান যে গতিতে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এসব নিয়ে, খোদা না খাস্তা যদি সত্যি নয়া পাকিস্তান টাইপ কিছু বানিয়ে ফেলেন যেখানে শান্তির দূতই কেবল পতাকা নাড়াবে আর ফরিস্তারা আঙুল, তবে এ পারে আমাদের কপালে দুঃখ আছে৷ অবিলম্বে চায়না, জাপান, বাংলাদেশ বা নিদেনপক্ষে ভুটানকে প্রধান শত্রু চিহ্নিত করতে হবে। রাবন মরলে আর কি আর রামের বীরগাঁথা জমে? রাম সাজতে হলে রাবন সাজাতে পারা দরকারি। না পারলে সব কিছু ঝোলা থেকে বেরিয়ে যাবে।
তখন কথায় কথায় পাকিস্তানের চক্রান্ত বলা যাবেনা। পাড়ার কলে জল না এলে ও পাকিস্তানের দোহাই দেওয়া যাবে না। দেশে মুদ্রাস্ফীতি হলে ও পাক সন্ত্রাস বলা যাবেনা। বিরোধী প্রশ্ন করলেও থামানো যাবেনা সীমান্তের সেন্টিমেন্ট দিয়ে৷ সে বড় অস্বস্তি হবে। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা না খেললে আর কি বা খেললাম। কুড়িয়ে বাড়িয়ে কিছু হিন্দু-মুসলিম খেলা আর ওই কাস্ট কাস্ট দ্বন্দ্ব।
অবশ্য জাঙ্গিয়ার যেরকম বুক পকেট হয়না, তৃতীয় বিশ্বের দেশের ও বিসামরিকীকরণের বিলাসিতা মানায় না। এতে বিগ ব্রাদারেরা রেগে যায়। আপনার শিক্ষার বাজেট যদি ফ্রান্স থেকে যুদ্ধবিমান কেনার বাজেটের বেশি হয়, বুঝতে হবে আপনি অপদার্থ। অবিলম্বে অস্ত্র বর্ষণ করে সরকার ফেলে দেওয়া শ্রেয়। ইজরাইল থেকে কেনা অস্ত্রের থেকে আপনি যদি বেশি উত্তেজিত হন, দেশের সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা সমৃদ্ধি নিয়ে, সরিয়াস রাষ্ট্রীয় প্রবলেম বাওয়া।
সুতরাং পেট্রো ডলার আর কালাশনিকভ চমকালেই ভারত পাক ঝলমলাবে৷ এ দুই দেশের ঝামেলা শেষ হওয়া মানে বৃহত্তর ক্ষতি। অস্ত্র বাজারে খাঁ খাঁ শূন্যতা। মুক্ত বাজারে তা কি করে বরদাস্ত করা যায় মিঁঞা!পরশী দেশের পাক ইরাদা থাকতেই পারে, নাপাক করবে বিগ ব্রাদার৷ আংকেল স্যামের দিব্বি লেকে রহেংগে পাকিস্তান।
অগত্যা কোক স্টুডিও দূর হাটাও। পুষে রাখা ঘৃণার দুশমনি যতাও। মাথায় রাখবেন, আপনি যতই মনে মনে স্বপ্ন দেখেন না কেন সচীন আর শোয়েব আখতার একদিন একটিমে খেলবে আর সব বিশ্বকাপ অবিভক্ত ভারত জিতে নেবে, র্যাডক্লিফ সাহেব অন্যত্র ভেবেছিলেন ও সে মতো ৪৭ সালে পিচ ও বানিয়ে গেছিলেন। এবার আজীবন শত্রু শত্রু খেলুন।
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )