আজ, সোমবার শহরে বসছে ছোট ও মাঝারি শিল্পের বড় সম্মেলন। বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে দু’দিনের এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু বিনিয়োগ আহ্বান করাই নয়, এবারের সম্মেলনের অন্যতম উদ্দেশ্য শেয়ার বাজারের মাধ্যমে এবং অন্যান্যভাবে পুঁজি জোগাড়ে সরকারি সহায়তা দেওয়া। এর পাশাপাশি এই সম্মেলনের মাধ্যমে ছোট শিল্পের হরেক সমস্যার সমাধান এক ছাতার তলায় আনার উদ্যোগ নেবে রাজ্য সরকার। বিগত কয়েক মাস ধরে ওই শিল্প সম্মেলন সফল করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দপ্তর। তখন সম্মেলনটির শিরোনাম ছিল ‘সিনার্জি’। সেই সময় অতিরিক্ত মুখ্যসচিব হিসেবে দপ্তরের দায়িত্বে ছিলেন রাজীব সিনহা। অতিসম্প্রতি সেই দায়িত্বে এসেছেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পর অবশ্য বদলে গিয়েছে অনুষ্ঠানের শিরোনাম। ‘সিনার্জি’র বদলে এখন অনুষ্ঠানটির নাম হয়েছে ‘স্টেট এমএসএমই কনক্লেভ’।
বড় শিল্পে রাজ্যে কতটা লগ্নি এল, তা নিয়ে বিতর্ক চলতেই পারে। কিন্তু বিনিয়োগ আনার জন্য রাজ্য সরকার যে কোনও কাপর্ণ্য করছে না, তা বলাবাহুল্য। কারণ, একদিকে যেমন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই দেশ-বিদেশে বদলে যাওয়া বাংলার শিল্প সম্ভাবনা তুলে ধরছেন, তেমনই সরকারও শিল্পের গা থেকে লালফিতের ফাঁস আলগা করে নাম কিনেছে দেশজুড়ে। বিভিন্ন দপ্তরের প্রশাসনিক সংস্কার করে ব্যবসার পথ অনেক সহজ করেছে সরকার। এর পাশাপাশি আছে ফি বছর বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের আয়োজন। সেখানে যেমন ডাকসাইটে শিল্পপতিরা হাজির হচ্ছেন, তেমনই বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিও মিলছে প্রচুর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই সম্মেলনের হাত ধরে বাস্তবে লগ্নি কতটা এল, তা নিয়ে আলোচনার চেয়েও বেশি জরুরি পশ্চিমবঙ্গের শিল্পবান্ধব ভাবমূর্তি তুলে ধরা। বঙ্গ সম্মেলনে সেই কাজটিতে রাজ্য সরকার সাফল্য পাচ্ছে, দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সেসবই বড় লগ্নি ধরার জন্য। ছোট শিল্পকে উৎসাহ দিতে জেলায় জেলায় কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার নাম ‘সিনার্জি’। সেই অনুষ্ঠান যতটা লগ্নিমুখী, তার চেয়েও তা শিল্প করার ক্লিনিক হিসেবেই বেশি পরিচিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর ছোট শিল্পের জন্য কলকাতায় একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তাতে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি, বলছেন দপ্তরের কর্তারাই।
এবার তাই একেবারে নতুন আঙ্গিকে শিল্প সম্মেলন করতে চাইছে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দপ্তর। যেহেতু ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে শিল্পের পুঁজি জোটানো এখনও রীতিমতো চ্যালেঞ্জের, তাই শেয়ার বাজারকেই আপাতত মূলধনের আঁতুড়ঘর করতে চাইছে সরকার। এর জন্য রাজ্যের বিভিন্ন বণিকসভা, দায়িত্বে থাকাকালীন ছোট ও মাঝারি শিল্পের সংগঠনের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছিলেন রাজীব সিনহা। পরবর্তীকালে সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই কাজ করেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। জানা গিয়েছে, এই বিষয়ে শেয়ার বাজারের হাত ধরে মূলধন জোটানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে ইতিমধ্যেই দেশের বৃহত্তম শেয়ার বাজার ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সরকারি স্তরে কথাবার্তা অনেকটাই এগিয়েছে। এদিনের অনুষ্ঠানে তারা হাজিরও থাকছে, এমনটাই জানা গিয়েছে।
গত মার্চ পর্যন্ত হিসেব বলছে, এদেশে ৬ কোটি ৩০ লক্ষ ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প সংস্থা রয়েছে। আট কোটি মানুষের রুটি-রুজি এর সঙ্গে জড়িত। তারা ছ’হাজার রকমের পণ্য তৈরি করে এই দেশে। দেশের মোট উৎপাদনের আট শতাংশ আসে এখান থেকে। মোট শিল্পোৎপাদনের ৪৫ শতাংশ বহন করে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প। রপ্তানির ৪০ শতাংশ দখলে রাখে এরাই। এই পরিসংখ্যানকে সামনে রেখেই এগতে চাইছে রাজ্য। তাই আরও বিনিয়োগের লক্ষ্যে দেশের সেরা হতে ফের একবার আসরে নামছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। নিউটাউনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রায় পাঁচ হাজার উদ্যোগপতি হাজির হবেন, আশা করছে সরকার।
শিল্প গড়তে গেলে যদি কোনও অসুবিধা হয়, তাহলে সরকার কীভাবে তার জট কাটাতে পারে, দু’দিনের সম্মেলনে তার দিশা দেখানো হবে। থাকবে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, যারা ঋণ সংক্রান্ত পরামর্শ দেবে। থাকবেন বিশেষজ্ঞরা, যাঁরা শিল্পের পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করবেন। স্টার্ট আপের জন্যও আলাদা পরামর্শের ব্যবস্থা থাকছে বলে জানা গিয়েছে। এত আয়োজনের পর বাস্তবে ছোট শিল্পে সাফল্য কতটা আসে, এখন সেটাই দেখার।